উল্টোডাঙার শিশু এ বার ডেঙ্গির বলি

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বস্তির এক চিলতে ঘরে ছেলের খেলার জিনিস জড়িয়ে বসে তির্যকের মা ঝুমা চক্রবর্তী। বারবার সংজ্ঞাহীন হচ্ছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:০০
Share:

তির্যক চক্রবর্তী

ডেথ সার্টিফিকেট, যাতে মৃত্যুর কারণ হিসেবে স্পষ্ট লেখা রয়েছে ডেঙ্গি।

Advertisement

ফের ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু।
ফের উল্টোডাঙায়। মাত্র দু’সপ্তাহ আগেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে উল্টোডাঙার মুরারিপুকুর রোডের বাসিন্দা এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছিল। বুধবার ভোরে মৃত্যু হল ওই এলাকারই এক শিশুর।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের হরিশ নিয়োগী রোডের বাসিন্দা তির্যক চক্রবর্তী (৬) গত শুক্রবার থেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়। শনিবার সকালে স্থানীয় চিকিৎসককে দেখানোর পরেও জ্বর না কমায় সোমবার রক্ত পরীক্ষা করানো হয় তার। ওই রাতে তির্যকের রক্তপরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায় সে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই তির্যককে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার রাতে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বুধবার ভোরে সেখানেই মৃত্যু হয় তার। হাসপাতালের তরফে ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গির উল্লেখও করা হয়েছে।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বস্তির এক চিলতে ঘরে ছেলের খেলার জিনিস জড়িয়ে বসে তির্যকের মা ঝুমা চক্রবর্তী। বারবার সংজ্ঞাহীন হচ্ছেন তিনি। একমাত্র ছেলে তির্যক টাকি বয়েজ স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল। বাবা, পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী তিলক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জ্বরের
পাশাপাশি পেটে খুব ব্যথা ছিল। মঙ্গলবার সল্টলেকের হাসপাতালে আলট্রাসোনোগ্রাফি হয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, ওর পেটে জল জমেছে।’’ তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার রাত দশটা নাগাদ তাঁরা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতেই ছেলের শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর জানিয়ে ফোন আসে। ফের তাঁরা হাসপাতাল ছোটেন। ওই রাতেই বাইপাসের ধারের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তির্যককে।

তির্যকের বাড়ির পাশেই স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তীর বাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও কাউন্সিলর এক দিনের জন্যও এলাকা ঘোরেননি। বুধবার হরিশ নিয়োগী রোডে গিয়ে দেখা গেল, মৃত তির্যকের পড়শি এক কিশোরীও ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে ঘরবন্দি। এলাকারই বাসিন্দা তির্যকের মাসতুতো ভাই পবিত্র বন্দোপাধ্যায়ও ডেঙ্গি নিয়ে ই এস আই হাসপাতালে ভর্তি। এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ফের একই এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু হওয়ায় স্থানীয়েরা বারবার দুষছেন কলকাতা পুরসভাকে। তাঁদের অভিযোগ, পুরসভা থেকে এলাকায় নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই এবং নিকাশি নালা পরিষ্কার হয় না। মশার উপদ্রবও বাড়ছে। তিলকবাবুর বক্তব্য, ‘‘গোটা রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সরকারি তরফে কোনও আমল দেওয়া হচ্ছে না। এটা ঠিক নয়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিনীত আবেদন, রাজ্য থেকে ডেঙ্গি নির্মূল করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’ এ দিকে অমলবাবু বাসিন্দাদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমার এলাকায় জঞ্জাল ও নিকাশি নিয়ে অভিযোগ থাকার কথা নয়।’’

—নিজস্ব চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement