আলিপুর আদালত চত্বরে অভিযুক্তেরা। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র
কিশোরীকে পরপর ধর্ষণ করার পরে তাকে ঘরে আটকে রেখে উধাও হয়ে গিয়েছিল চার অভিযুক্ত। কয়েক ঘণ্টা পরে তারা ফিরে আসে বিরিয়ানি নিয়ে এমনকি, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা কিশোরীকে বিরিয়ানি খেতেও বলে। বৃহস্পতিবার রাতে একবালপুরের ফ্ল্যাটে কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগের তদন্তে এমনই তথ্য পেয়েছেন বলে জানান তদন্তকারীরা।
শুক্রবার ওই ঘটনায় শিশু যৌন নির্যাতন বিরোধী (পকসো) আইনে গণধর্ষণের মামলা রুজু করে চার অভিযুক্ত, অমরজিৎ চৌপল ওরফে রাহুল, মনোজ শর্মা, বিকাশ মল্লিক এবং ঋত্বিক রামকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার আরও এক অভিযুক্ত সঞ্জয় মৃধাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে ধর্ষণ হয়েছিল বলে পুলিশ জানায়। ডিসি (বন্দর) সৈয়দ ওয়াকার রেজা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় সাত দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা দিতে একবালপুর থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অমরজিৎ পেশায় ক্যাবচালক। ঋত্বিকের বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে সে দিন দুয়েক আগে একবালপুরে এসেছে। বিকাশ নাচের পেশায় যুক্ত।
অমরজিৎ, মনোজ, বিকাশ ও ঋত্বিককে এ দিন আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল আদালতে জানান, ১২ বছরের ওই কিশোরীকে পরিকল্পনা করে গণধর্ষণ করা হয়েছে। কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে এবং তার ও অভিযুক্তদের পোশাক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কিশোরীর গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করার আর্জিও জানান তিনি। সওয়াল-জবাব শুনে বিচারক চার জনকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সঞ্জয়কে আজ, রবিবার আদালতে হাজির করানো হবে। সঞ্জয় গণধর্ষণের বিষয়টি জানত কি না, তা তাকে জেরা করে জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন: গোপন জবানবন্দির আবেদন জানাবেন অভিযোগকারিণীই
অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ওই কিশোরীর মা মারা গিয়েছেন আগেই। বাবা বেসরকারি সংস্থার কর্মী। পুলিশ সূত্রের খবর, মেয়ে নিখোঁজ বলে বৃহস্পতিবার রাতে পর্ণশ্রী থানায় জানিয়েছিলেন বাবা। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে কিশোরীর সন্ধান করতে নেমে পুলিশ মনোজের নম্বর পায় এবং তাকে ফোন করে কিশোরীর খোঁজখবর করে। পরে মনোজই কিশোরীকে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ সূত্রের দাবি, কিশোরীকে ছেড়ে দেওয়ার আগেই ঘটনার কথা কাউকে না-জানানোর জন্য হুমকি দিয়েছিল অভিযুক্তেরা।
মনোজ ভেবেছিল, থানায় কিশোরীকে পৌঁছে দিলে পুলিশের নজরে সে ‘ভাল’ হবে। কিশোরী যে থানায় এসে উল্টে গণধর্ষণের অভিযোগ জানাবে, তা সে ভাবেনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে তারা জেনেছে, অমরজিতের জন্মদিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সে বাড়ির সামনের একটি মাঠে তার সঙ্গে দেখা করতে যায়। ওই যুবকের সঙ্গে মাসখানেক আগে আলাপ হয়েছিল কিশোরীর। কিছু ক্ষণ পরে সেখানে আসে মনোজ। তার সঙ্গে দিন সাতেক আগে পরিচয় হয়েছিল মেয়েটির। অমরজিৎ কিশোরীকে জানায়, একবালপুরের এক যুবকের কাছ থেকে সে টাকা পাবে। সেই টাকা আনতে মোটরবাইকে কিশোরী ও মনোজকে নিয়ে একবালপুরের ভূকৈলাস রোডে যায় অমরজিৎ।
পুলিশের কাছে কিশোরী জানায়, অমরজিৎ তাকে বলেছিল, একবালপুরে তার এক বন্ধুর ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাট রয়েছে। অমরজিৎ ও মনোজের সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটে যায় কিশোরী। সেখানে গিয়ে সে দেখে, বিকাশ, ঋত্বিক ও সঞ্জয় রয়েছে। কিছু ক্ষণ পরে সঞ্জয় চলে গেলে মনোজ, বিকাশ ও ঋত্বিক ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে যায়। সেই সময় অমরজিৎ কিশোরীকে শৌচাগারে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে এবং তার পর বাকি তিন জন ঘরে তাকে ধর্ষণ করে বলে কিশোরীর অভিযোগ। এর পরে তাকে ঘরে আটকে রেখে বেরিয়ে যায় চার জন। কিশোরী পুলিশকে জানিয়েছে, কয়েক ঘণ্টা পরে চার জন ফিরে এসে তাঁকে বিরিয়ানি খেতে দেয়। সে খায়নি। ওই চার জন বিরিয়ানি খাওয়ার পরে মনোজ তাকে শুক্রবার ভোর পৌনে চারটে নাগাদ মোটরবাইকে তার বাড়ির কাছে ছেড়ে দেয়। তবে কিশোরীর পরিবারের কাছ থেকে তখনই থানায় কিছু জানানো হয়নি। ফলে সকালে পুলিশ কিশোরীর সন্ধান শুরু করে এবং মনোজের নম্বর পেয়ে তাকে ফোন করে।