নতুনত্ব: শহরের একটি স্কুলের ভার্চুয়াল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এক অংশগ্রহণকারী। িনজস্ব চিত্র
স্কুলে স্কুলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছে। অথচ, মাঠে কেউ নেই! ফলে খেলতে নেমে ধুলো মাখামাখির ব্যাপার নেই। অতএব বাড়ি ফিরে পুরস্কার দেখানোরও সুযোগ নেই! করোনার জন্য সিবিএসই, আইসিএসই বোর্ডের বহু স্কুলেই গান-আবৃত্তির মতো এ বার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও হচ্ছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে।
যে সমস্ত স্কুল এই উদ্যোগ নিচ্ছে তাদের দাবি, নিউ নর্মালের আর পাঁচটা বিষয়ের মতো ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও এ বার অন্য রকম হচ্ছে। কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ আবার বলছেন, ‘‘ময়দানে নেমে কসরত ছাড়া ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয় নাকি?’’
মহাদেবী বিড়লা ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষা অঞ্জনা সাহা যদিও মনে করেন, দীর্ঘদিন স্কুলে আসতে না পারা পড়ুয়াদের কাছে যে কোনও ভাবে স্কুলের সঙ্গে যুক্ত থাকাটাই আনন্দের। ফলে ভার্চুয়াল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার এই মুহূর্তে কোনও বিকল্প নেই। ওই স্কুলে সম্প্রতি হয়ে গেল ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। সেখানকার মিডল স্কুল কোঅর্ডিনেটর বসুন্ধরা ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে বাড়ি থেকেই করা যায়, এমন কিছু বিষয়ের উপরেই প্রতিযোগিতা হয়েছে।
যেমন, একটি ক্ষেত্রে ১০টি ‘এ-ফোর’ কাগজ পর পর মাটিতে পাততে বলা হয়েছিল। এতে কাগজের লম্বায় যে সরলরেখা তৈরি হয় তার উপর দিয়ে ‘পুশ-আপ স্টান্সে’ কাগজ না ছুঁয়ে বাঁ দিক থেকে ডান দিকে এবং ডান দিক থেকে বাঁ দিকে যেতে বলা হয়। তিরিশ সেকেন্ডের মধ্যে যে বেশি বার এটা করতে পারবে, সে-ই প্রথম। অন্য একটি ক্ষেত্রে, ২০ ইঞ্চির তফাতে দু’লিটারের দু’টি জল ভর্তি বোতল বসিয়ে তার মাঝে শুয়ে কোমর থেকে পা উপরে তুলে বাঁ দিকের বোতলের বাঁ পাশে আর ডান দিকের বোতলের ডান পাশে ছোঁয়াতে বলা হয়। হাত ব্যবহার করলেই প্রতিযোগী বাতিল। এ ছাড়াও ফুটবলের মাপের বল হাতে তিরিশ সেকেন্ডের মধ্যে সিট-আপ এবং দড়ি-লাফানো খেলা ছিল। বসুন্ধরা বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে ছোটদের শারীরিক কসরত প্রায় বন্ধ। সেটা মাথায় রেখেই অন্য ভাবে কিছু ভাবতে হত।’’
একই ভাবে সম্প্রতি ভার্চুয়াল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সেরেছে মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লস। স্কুলের ডিরেক্টর দেবী কর বলেন, ‘‘প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির আটশোর বেশি পড়ুয়া অংশ নিয়েছে। বড়দের প্রতিযোগিতাও একই ভাবে সেরেছি। বেঁধে দেওয়া সময়ে নিজের শারীরিক দক্ষতা তুলে ধরাটাও একটা শিক্ষা।’’
শ্রীশিক্ষায়তন স্কুলও একই পথে হাঁটার পরিকল্পনা করেছে। স্কুলের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জানুয়ারিতে প্রতি বার আমাদের স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়। শীঘ্রই ভার্চুয়াল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা করব। এখনও করোনা আছে, তবে জীবনও আটকে নেই। নতুন পদ্ধতিতে পড়ুয়াদের সঙ্গে একাত্ম থাকতে চাই।’’
যদিও এই নতুন পদ্ধতিতে ভরসা করছেন না রামমোহন মিশন হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে আমি ফিজ়িক্যাল অ্যাক্টিভিটি হিসেবেই দেখি। সেটা ভার্চুয়াল মাধ্যমে হলে দাবার মতো মেন্টাল গেম হয়ে যায়। সরকারি ভাবে পড়ুয়াদের স্কুলে আসা শুরু হলেই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা করব।’’
মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলছেন, ‘‘পড়ুয়াদের ঘরবন্দি জীবনে এই ধরনের উদ্যোগের সুফল অবশ্যই রয়েছে। এখনও ছোটরা সে ভাবে বাইরে বেরোচ্ছে না। ফলে নতুন কিছু করতে পারলেই তো ওদের আনন্দ। হোক না সেটা ভার্চুয়াল মাধ্যমে। তবে এটাও ঠিক যে, মাঠের ধুলো না মাখলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয় না।’’