অঙ্কিতা অগ্রবাল
সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে সোমবার। ২০২১ সালে হওয়া সর্বভারতীয় ওই পরীক্ষার মেধা তালিকায় এ বার প্রথম চার জনই নারী। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে কলকাতার মেয়ে অঙ্কিতা অগ্রবাল। কলকাতার লেকটাউনের মেয়ে। স্কুলজীবন কেটেছে এই শহরেই। তার পর কলেজের পাঠ নিতে দিল্লি যাত্রা। সেখানেই কর্পোরেটে চাকরি, ইউপিএসইসি পরীক্ষা দিয়ে রাজস্ব সার্ভিসে যোগ, তার পর ফের পরীক্ষা দিয়ে অবশেষে স্বপ্নপূরণ— আইএএস। বাংলার কন্যা তাঁর স্বপ্নপূরণের দিন আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন, ভবিষ্যতে মহিলাদের জন্য কাজ করতে চান। ট্রেনিং শেষে কোথায় পোস্টিং হবে তা এখনও অজানা, তবে বাংলায় কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে ষোলো আনা। অঙ্কিতা বলছেন, ‘‘সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। হাতছাড়া করব না।’’
সোমবার সিভিল সার্ভিসের ফল প্রকাশ হতেই দেখা যায়, প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মেয়ে শ্রুতি শর্মা। দ্বিতীয় নাম কলকাতার কন্যা অঙ্কিতার। সোমবার রাতে আনন্দবাজার অনলাইনকে অঙ্কিতা জানালেন, তাঁর লেখাপড়ার শুরুটা রুবি পার্কের কাছে এক বেসরকারি স্কুলে। পরে কলেজ স্তরের পড়াশোনা দিল্লিতে। দিল্লি বিশ্বিদ্যালয়ের সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক। এর পর কিছু দিন চাকরি করেছেন এক বেসরকারি সংস্থায়। চাকরি করতে করতেই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি। তার পর সুযোগ পেলেন আইআরএস (ইন্ডিয়া রেভিনিউ সার্ভিস)-এ। কর্পোরেট-চাকরি ছাড়তে হল। আইআরএসের ট্রেনিংয়ে এই মুহূর্তে ফরিদাবাদে রয়েছেন অঙ্কিতা। মেধাতালিকার প্রথম চার জনই নারী হওয়ার খুশি কলকাতার কন্যা। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েরা এ বার যা রেজাল্ট করেছে, সেটা সম্মান এবং গর্বের বিষয়।’’
আনন্দবাজার অনলাইনকে বাংলার কৃতী কন্যা কথায় কথায় জানালেন, কী ভাবে কর্পোরেটের ভাল বেতনের চাকরি করতে করতে দেশের জন্য কাজ করার তাগিদ অনুভব করেছেন মনের ভিতরে। অঙ্কিতা বলেন, ‘‘আমার ভাগ্য ভাল যে, শিক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও পরিবার পেয়েছি। অনেকে পান না। আমি সুযোগ পেয়েছি। এ বার আমার সমাজকে ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। সমাজের জন্য কিছু করার সময় এ বার।’’ নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জানালেন তিনি। বললেন, ‘‘ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নতির পাশাপাশি মহিলাদের আরও শক্তিশালী করার জন্য কাজ করতে চাই। এ ছাড়াও গ্রামোন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছা আছে। আর আমি তো বাংলার ক্যাডার। কাজ করার জন্য বাংলাকেই বেছে নেওয়ার চেষ্টা করব।’’
২০১৭ সালে কলেজ-জীবন শেষ। তার পর সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু। প্রথম সাফল্য ২০১৯-এ। সে বার আইআরএসে যেতে হল। কিন্তু লক্ষ্য ছিল আইএএস। সে কারণে ২০২১-এ ফের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসলেন। সেটা তৃতীয় বার। তারই ফল প্রকাশ হল সোমবার। বছর পাঁচেকের এই প্রস্তুতিতে বাড়িতে পড়াশোনা করার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি হয়েছিলেন কোচিং সেন্টারেও। দিনে কখনও ছয় ঘণ্টা, তো কখনও ১২ ঘণ্টা— পড়াশোনা করেছেন নিয়মিত। এ ক্ষেত্রে এক শতাংশও ফাঁকি দিলে চলবে না বলে জানালেন অঙ্কিতা। নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন আগামীর সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থীদের। তিনি বলেন, ‘‘পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে ধৈর্য্য হারালে চলবে না। নিজের উপর ভরসা রেখে সিভিল সার্ভিসে আসার কারণকেই অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজে লাগাতে হবে।’’ সঠিক প্রশিক্ষণ নিতে কী দূরত্ব বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘করোনার পর ভিন্ রাজ্যের অনেক সংস্থা অনলাইন প্রশিক্ষণ শুরু করেছে। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীরা চাইলে ওই সব জায়গা থেকেও প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। দূরত্ব বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।’’
নিজের লক্ষ্যে সর্বদা অবিচল ছিলেন অঙ্কিতা। বললেন, ‘‘আমি তো গোল ঠিক করে ফেলেছিলাম। তাই স্নাতকোত্তরে আর ভর্তি হইনি। আইএস হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রথম বার আইআরএস হতে হল। মাটি কামড়ে থেকে ফের পরীক্ষা দিই। পরীক্ষায় উতরে যাব জানতাম। তবে দ্বিতীয় হব, ভাবিনি। খুবই আনন্দ হচ্ছে।’’ অঙ্কিতার মা, বাবা, ছোটভাই কলকাতায় থাকেন। চলতি সপ্তাহে তিনি বাড়ি আসার ইচ্ছার কথাও জানালেন আনন্দবাজার অনলাইনকে। আনন্দের এই মুহূর্ত পরিবারের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান কলকাতার কন্যা। বললেন, ‘‘ছোট থেকে মা-বাবা আমাকে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন। স্কুল থেকেই আমি কঠোর পরিশ্রমী ছিলাম। সব রকম পরিস্থিতিতে মা-বাবাকে পাশে পেয়েছি। কখনও জোর করে কোনও কিছু চাপিয়ে দেননি ওঁরা। আজ রেজাল্ট বেরোনোর পর থেকে তো মা-বাবার আনন্দের শেষ নেই। ওঁদের দেখেই আমার আরও ভাল লাগছে।’’
আর ছোট থেকে যে শহরে বড় হয়েছেন সেই কলকাতা সম্পর্কে জানতে চাইলে কী বললেন অঙ্কিতা? বললেন, ‘‘আলাদা করে কী বলব! ওটা তো আমার ঘরবাড়ি। মিস করছি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।