New Town Zoo

চিড়িয়াখানার বাসিন্দাদের সুস্থ রাখতে ফলের রস, ওআরএস

চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের সুস্থ রাখতে সম্প্রতি জারি করা এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রতিটি খাঁচায় পশুপাখিদের স্নানের জন্য পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৩ ০৭:৩৪
Share:

গরম থেকে বাঁচাতে জিরাফদের গায়ে জল স্প্রে করা হচ্ছে। নিউ টাউন চিড়িয়াখানায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

কয়েক দিনের স্বস্তির বৃষ্টির পরে ফের বাড়ছে শহরের তাপমাত্রা। আর সেই গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা পশুপাখিদেরও। তাই চিড়িয়াখানার চার দেওয়ালের মধ্যে থাকা পশুপাখিদের জন্য এই গরমে পর্যাপ্ত স্নানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। রাখতে হবে ফলের রসও। প্রতিদিন খাবারের পদেও আনতে হবে রদবদল। কলকাতা ও নিউ টাউন-সহ রাজ্যের চিড়িয়াখানাগুলিকে সম্প্রতি এমনই নির্দেশ পাঠিয়েছে রাজ্য বন দফতর। যদিও কলকাতা এবং নিউ টাউন চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষেরই দাবি, বন দফতরের ওই নির্দেশ ইতিমধ্যেই কার্যকর করা হচ্ছে।

Advertisement

চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের সুস্থ রাখতে সম্প্রতি জারি করা এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রতিটি খাঁচায় পশুপাখিদের স্নানের জন্য পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় পুরসভার সঙ্গে কথা বলে জলের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে পশুপাখিদের শরীরে যাতে জলের অভাব না হয়, সে জন্য প্রতিটি খাঁচায় রাখতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওআরএস।

পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রবল গরমে মানুষের মতোই পশুপাখিদেরও প্রায় একই ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। মানুষের মতো হিট স্ট্রোক কিংবা ডিহাইড্রেশনের আশঙ্কা থাকে তাদেরও। তখন তারা ঝিমিয়ে পড়তে পারে, শ্বাসকষ্টেও ভুগতে পারে। এই সময়ে তাদের খাওয়াদাওয়ার দিকে বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হয়।

Advertisement

আলিপুর চিড়িয়াখানার প্রাক্তন পশু চিকিৎসক দয়ানারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খেয়াল রাখতে হবে, ওদের যেন ডিহাইড্রেশন না হয়। ওআরএস জলে মিশিয়ে রাখতে হবে। বাঘ যেমন মূলত মাংস খায়। অতিরিক্ত গরমে মাংস শরীরে ডিহাইড্রেশন তৈরি করতে পারে। তাই এই সময়ে মাংস কম দিতে হবে, খাবারের সঙ্গে হজমের ওষুধ দিতে হবে।’’

আবার প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা মিন্টু চৌধুরী জানান, যে কোনও ভাবে কড়া রোদ থেকে পশুপাখিদের দূরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘হিট স্ট্রোক প্রাণীদের জন্যেও ক্ষতিকর। তাতে পেট খারাপ হতে পারে, কিডনির ক্ষতি করতে পারে। তাই যে কোনও উপায়ে এই সব সমস্যা থেকে প্রাণীদের রক্ষা করতে হবে। শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য ব্যাহত হতে দেওয়া যাবে না।’’

আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ওই চত্বরে প্রচুর গাছপালা থাকার কারণে চিড়িয়াখানার পশুপাখিরা গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতে পারে। তা সত্ত্বেও গরম ও তা থেকে শারীরিক সমস্যা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। অধিকর্তা তাপস দাস জানান, পশুপাখির খাঁচায় জল স্প্রে করে তাপমুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘খাবারে ফলমূল বেশি দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজন মতো ওআরএস-ও দেওয়া হচ্ছে। পানীয় জল নিয়মিত পাল্টানো, খাবারের পাত্র পরিষ্কার রাখা— সবই করা হচ্ছে। নির্দেশিক আসার আগে থেকেই ওই সব কাজ করা শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ কর্তৃপক্ষ আরও জানাচ্ছেন, পশুপ্রাণীদের গা ভেজানোর চৌবাচ্চার জলও নির্দিষ্ট সময় অন্তর বদলানো হচ্ছে, যাতে সেই জল গরম না হয়ে যায়।

নিউ টাউনের নতুন চিড়িয়াখানার বয়স কম। সেখানে এমনিতেই বালি ও মাটি দিয়ে জলা ভরাট করে গড়ে উঠেছে। তাই সেই মাটি থেকে গরম ছড়ায় বলেই বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন। তাই সেই চিড়িয়াখানায় থাকা পশুপাখিদের সংখ্যা খুব একটা বেশি না হলেও তাদের গরম থেকে রক্ষা করতেও ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খাঁচায় জল স্প্রে করা থেকে শুরু করে খাবারের পদেপরিবর্তন-সহ বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। রেঞ্জার বিবেক ওঝা জানান, তাঁদের চিড়িয়াখানায় জলহস্তী, জিরাফ, জ়েব্রা, কুমির রয়েছে। জিরাফ ও জ়েব্রার খাঁচা ঠান্ডা রাখতে দিনে তিন বার করে জল ছেটানো হচ্ছে। তরমুজ খাওয়ানো হচ্ছে জিরাফ, জ়েব্রা, বাঁদর, পাখিদের। কুমিরকে মুরগির মাংস দেওয়ার থেকে পরিখায় ছাড়া জ্যান্ত মাছ খাওয়ানোর উপরে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement