শিম্পাঞ্জির ফলাহার। আলিপুর চিড়িয়াখানায়। — রণজিৎ নন্দী
সকাল ন’টা নাগাদ আড়াল ছেড়ে বেরোনোর কথা ওদের। খাঁচার মধ্যেই থাকার কথা, তবে ঘেরাটোপের বাইরে। যাতে দর্শকেরা দেখতে পান। ঘণ্টা সাতেক দর্শন দিয়ে ফের বিকেল সাড়ে চারটেয় খাঁচার ঘেরাটোপে ঢুকে পড়ার কথা। কিন্তু কলকাতার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁতেই তাদের এই নিত্যদিনের রুটিনে ছেদ পড়েছে।
তারা, অর্থাৎ আলিপুর চিড়িয়াখানার বাসিন্দারা। চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, ঘড়ির কাঁটা দুপুর ১২টার দিকে এগোলেই ইদানীং বাঘ, সিংহ, জিরাফ, জেব্রা ঢুকে পড়ছে খাঁচার ঘেরাটোপে। অথবা খাঁচার চৌহদ্দির মধ্যে ছায়াঘেরা কোনও ঝোপের আড়ালে গিয়ে বসে থাকছে চুপচাপ। সূর্যের তেজ না কমা পর্যন্ত জায়গা ছেড়ে নড়ছে না। কেউ ক্লান্তিতে দিবানিদ্রায় ঢলে পড়ছে, কেউ বা ছায়ায় বসে ঝিমোচ্ছে, হাই তুলছে। ফলে দিনের শেষে একরাশ ক্লান্তি আর পশুপাখিদের না দেখার মন খারাপ নিয়ে চিড়িয়াখানা ছাড়ছেন দর্শকেরা। তবে এই গরমে অবশ্য কমেছে দর্শকের সংখ্যাও। শীতের মরসুমে ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেলেও এখন কয়েক দিনে দর্শক হচ্ছে দেড় হাজারের সামান্য বেশি।
এই গরমে চিড়িয়াখানার বাসিন্দাদের যতটা সম্ভব আরাম দেওয়ার চেষ্টা করছেন কর্তৃপক্ষ। শিম্পাঞ্জি আর ভালুকের জন্য হয়েছে ফ্যানের ব্যবস্থা। সেই হাওয়া ছেড়ে তারা নড়তেই চাইছে না। গরমে রুটি খেলে শরীর খারাপ হতে পারে। তাই ভালুক খাচ্ছে দই-ভাত। আর শিম্পাঞ্জিদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে তরমুজ, আঙুর, শশা। শরীর ঠান্ডা রাখতে অবশ্য বেশি করে শশা ও তরমুজ খাওয়ানো হচ্ছে সকলকেই। আর শরীরে জলের পরিমাণ যাতে না কমে, তাই দিনে চার বার করে পশুপাখিদের দেওয়া হচ্ছে ওআরএস।
পাখিদের ক্ষেত্রে দানা খাবারের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে শসা কুচি। খাঁচার উপরে দেওয়া হয়েছে ছাউনি। চারদিকে জল ছিটিয়ে খাঁচা ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।
তীব্র গরমেও কাঁচা মাংস ছাড়া কোনও খাবার খুব একটা মুখে রোচে না বাঘ-সিংহের। কিন্তু গরমে বেশি মাংস খেলে শরীর খারাপ হতে পারে বলে সেই পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। শরীর ঠান্ডা রাখতে দিনে দু’-তিন বার করে স্নান করানোর ব্যবস্থা হয়েছে হাতিদের।
আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্তর কথায়, ‘‘পারদ চড়ার আভাস পেতেই পশুপাখিদের সুস্থ রাখতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছি। ফলে কেউ অসুস্থ হয়নি।’’
গুয়াহাটি এবং রৌরকেলা চিড়িয়াখানা থেকে এ মাসেই আলিপুরে আসার কথা ছিল সাত নতুন অতিথির। যে তালিকায় রয়েছে এক জোড়া ‘বেঙ্গল স্লো লরিস’ বা লজ্জাবতী বাঁদর, দু’জোড়া ‘চিতা বিড়াল’ ও একটি চৌশিঙা হরিণ। চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, তীব্র গরমে এখনই তারা আসছে না। আশিসবাবু বলেন, ‘‘গরমে দীর্ঘ পথের ধকল সইতে পারবে না নতুন অতিথিরা। তাপমাত্রা একটু কমলেই তাদের আনার ব্যবস্থা করা হবে।’’