আকাশপ্রতাপ কুঁড়ি (ইনসেটে)। —নিজস্ব চিত্র।
চায়ের দোকানে বচসার জেরে এক তরুণকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল। শুক্রবার বিকেলে, গিরিশ পার্কে। এই ঘটনায় শনিবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু হয় আহত তরুণের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম আকাশপ্রতাপ কুঁড়ি (১৮)। তাঁর বাড়ি দমদমের পাতিপুকুর এলাকায়। পুলিশ মৃতদেহের ময়না তদন্ত করাচ্ছে। সেই সঙ্গে খোঁজ চলছে মূল অভিযুক্ত, চা-বিক্রেতার। তাঁরও মাথায় ছ’টি সেলাই পড়েছে বলে খবর। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে এ দিনই সঞ্জয় গুজরাটি এবং অমরদীপ বিশ্বকর্মা নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতেরা ঘটনাস্থলের আশপাশের বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার বিকেলে আকাশ তাঁর ভাই চন্দনপ্রতাপ কুঁড়ির সঙ্গে গিরিশ পার্ক থানার কোম্পানিবাগান এলাকায় গিয়েছিলেন। চন্দন জানিয়েছেন, মোমোর দোকান দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। তাই ওই এলাকার নতুনবাজারে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন। এর পরে রবীন্দ্র সরণির ট্রামলাইনের ধারে, সেখানকার লোহাপট্টি লাগোয়া রামবাগানে একটি চায়ের দোকানে চা খেতে দাঁড়ান তাঁরা। পুলিশ জেনেছে, দোকানটি কারা সিংহ নামে স্থানীয় এক যুবকের। সেখানেই গন্ডগোলের সূত্রপাত। এর পরে সন্ধ্যায় গিরিশ পার্ক থানায় ঝামেলার খবর যায়। পুলিশ গিয়ে আহত আকাশ এবং চন্দনকে উদ্ধার করে। প্রথমে তাঁদের কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখান থেকে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে পাঠানো হয়। রাতে সেখানেই ভর্তি ছিলেন আকাশ। এ দিন সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। চন্দনকে চিকিৎসার পরে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনিই রাতে গিরিশ পার্ক থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। চায়ের দোকানের মালিকের মাথাতেও ছ’টি সেলাই পড়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করিয়ে তিনিও থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, চন্দনের দাবি, ওই দোকানে চা খাওয়ার পরে সেখান থেকে গুটখা কেনেন তাঁরা। তখন গুটখার দাম বেশি চাওয়া হয় তাঁদের থেকে। তা নিয়েই বচসার শুরু। যা গড়ায় হাতাহাতিতে। চা-বিক্রেতা কারা যদিও পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, তিনি জল বিক্রি করেন না বলার সঙ্গে সঙ্গেই ওই দুই তরুণ তাঁকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। বারণ করলেও তাঁরা শোনেননি। এর পরেই দু’পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। চন্দনের দাবি, লোহার রড দিয়ে দুই ভাইকে পেটানো হয়। লোহার শাটারে আকাশের মাথা ঠুকে দেওয়া হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ, ওই দুই তরুণের মধ্যে এক জন লোহার পাত্র তুলে কারার মাথায় আঘাত করেন। তাতেই ওই এলাকার লোকজন বেরিয়ে এসে দুই তরুণকে বেধড়ক মারধর করেন। থানায় খবর গেলে এর পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিডন স্ট্রিট দিয়ে মিনার্ভা সিনেমা হল পার করে কোম্পানিবাগানের ঘটনাস্থলে পৌঁছে এ দিন দেখা গেল, থমথমে পরিস্থিতি। পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে পাড়ার মোড়ে। সেখানে মাঝেমধ্যেই ঘুরে যাচ্ছেন থানার তদন্তকারী অফিসারেরা। কারার চায়ের দোকানটি দেখিয়ে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘‘বেপাড়ার ছেলেরা এসে কারাকে মারছে! লোকজন কি ছেড়ে দেবে!’’ দেখা যায়, ওই চায়ের দোকানটির ঝাঁপ ফেলা রয়েছে। উপরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সহ বিজ্ঞাপন লাগানো। সেখানকার এক বাসিন্দার আবার দাবি, ‘‘এই কারার বিশাল প্রভাব এলাকায়। স্থানীয় নেতা-দাদাদের আশীর্বাদধন্য কারাকে ভয় করে চলেন প্রায় সকলেই। ট্রামলাইনের ধারে কোথায় গাড়ি দাঁড় করানো হবে থেকে কোথায় বেআইনি নেশার দ্রব্য বিক্রি হবে, সবটাই তাঁর কথা মতো চলে!’’ তবে কোম্পানিবাগানের বস্তিতে কারার ঘর পর্যন্ত গেলে দেখা যায়, সেখানে ছোট্ট জায়গার মধ্যে সদ্যোজাত শিশুকে সামলাতে ব্যস্ত কারার মেয়ে মিতু কোটেচা। বললেন, ‘‘বাবা হাসপাতাল থেকে আর বাড়ি ফেরেনি। ফোনও রেখে গিয়েছে।’’ এখন পুলিশ তাঁকে খুঁজছে। স্থানীয়দের অনেকেরই দাবি, কারা এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন।