ফাইল চিত্র।
ব্যবসায়িক কাজের জন্য বৃক্ষনিধনের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের একটি নির্দেশ বিভিন্ন মহলে তুমুল সাড়া ফেলেছে। এর জন্য ৪০ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে এক সংস্থার। আরও নির্দেশ, ওই জায়গায় ১০০টি গাছ লাগাতে হবে।
বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এই নির্দেশ নজিরবিহীন ও দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী বলেই মনে করছেন পরিবেশকর্মী এবং বন বিভাগের কর্তারা। তাঁরা বলছেন, গাছ বাঁচাতে এমন শাস্তিই দরকার। পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন হতে পারে না। সাততারা হোটেল তৈরির জন্য রাসেল স্ট্রিটে ৬২টি গাছ কেটেছিল একটি সংস্থা। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং কিছু ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। সংস্থাটি বন দফতর ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি হাই কোর্টে গেলেও রায় গেল তাদের বিরুদ্ধেই।
বন দফতরের খবর, জমা জলে মশার বংশ বৃদ্ধি ঠেকানোর যুক্তি দেখিয়ে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাছগুলি কাটা হয়। অনুমতি ছাড়াই গাছ কাটায় শেক্সপিয়র সরণি থানা এক জনকে গ্রেফতার করে। মামলা ব্যাঙ্কশাল কোর্টে ওঠার পরে বিষয়টি কলকাতার ডিএফও (ইউটিলাইজ়েশন)-এর কাছে নিষ্পত্তির জন্য জমা পড়ে। ডিএফও উৎপল নাগ আবেদনকারীদের জানান, এত গাছ কাটার বিষয় এ ভাবে নিষ্পত্তি হতে পারে না। তিনি নির্মাণের অনুমতিও আটকে দেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি চলতি বছরে হঠাৎই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়।
বিচারপতি মান্থার এজলাসে বিষয়টি উঠলে বন দফতরের তরফে সব নথি জমা দেওয়া হয়। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে বিচারপতি জানান, এত গাছ কাটার গুরুতর অপরাধে শুধু কারাদণ্ড নয়, প্রয়োজন আর্থিক দণ্ডও। সেই জরিমানার টাকা পরিবেশ রক্ষায় ব্যবহার হবে। নির্দেশ জারির পনেরো দিনের মধ্যে জরিমানার জমা পড়লে ডিএফও মামলার নিষ্পত্তি করতে পারবেন।
আইনজীবী মহলের বক্তব্য, জরিমানা জমা না-দিলে আদালত অবমাননার অভিযোগ করতে পারেন ডিএফও। সংশ্লিষ্ট সংস্থাও অবশ্য ডিভিশন বেঞ্চে বা সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে। তবে পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের অবস্থানও যথেষ্ট কড়া।
বন দফতরের খবর, ওই জমিতেই নতুন গাছ লাগানোর যথেষ্ট পরিসর রয়েছে। তা কী ভাবে হবে, বন দফতরই ঠিক করে দেবে। কর্তাদের একাংশের মতে, এই নির্দেশ বেআইনি গাছ কাটা রুখতে অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠবে।