সুভাষচন্দ্রের স্বাক্ষরিত মানপত্র। ছবি সৌজন্য: স্কটিশ চার্চ কলেজ
হলদে হয়ে যাওয়া পাতায় বাংলা ও ইংরেজিতে স্বাক্ষর। স্বাক্ষরকারীর নাম সুভাষচন্দ্র বসু! ১৯৩৮ সালে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পরে স্কটিশ চার্চ কলেজে সংবর্ধনা সভায় এসে মানপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন তিনি। সইয়ের নীচে জ্বলজ্বল করছে সে দিনের তারিখটিও।
‘বিখ্যাত’ প্রাক্তনীর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর সূচনা উপলক্ষে অনলাইন প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে স্কটিশ চার্চ কলেজ। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ পর্বের সেই নথিই এ বার উঠে এসেছে ওই প্রদর্শনীতে। প্রসঙ্গত, সে সময়ের রীতি মেনে সুভাষচন্দ্রকে ‘রাষ্ট্রপতি’ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। নথিটি কলেজকে দিয়েছিলেন আর এক প্রাক্তনী ভবানীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যক্ষা অর্পিতা মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি অনলাইন ওই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছেন। সুভাষচন্দ্রের জীবনের সঙ্গে জুড়ে থাকা নানা পর্বের নথিই উঠে এসেছে সেখানে। যেমন, একেবারে নবীন কলেজপড়ুয়া সুভাষের সাদা-কালো আলোকচিত্র। মাথা ভর্তি চুল, উজ্জ্বল চোখ আর নাকের তলায় সরু গোঁফের সেই চেহারার সঙ্গে আমজনতার মনে গেঁথে থাকা ‘নেতাজি’র ছবি অনেকটাই আলাদা। রয়েছে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার কোরের স্বেচ্ছাসেবক সুভাষের ছবিও।
সুভাষচন্দ্রের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর সূচনা উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ বার অনেক জায়গাতেই রাজনীতির ‘কালি’ লেগে গিয়েছে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল প্রাঙ্গণে খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের অনুষ্ঠানই তার উদাহরণ। এমনকি, ভিক্টোরিয়ার প্রদর্শনী ঘিরেও তৈরি হয়েছিল ‘নথি-বিতর্ক’। অনেকেরই মতে, স্কটিশ চার্চের প্রদর্শনী অনেক বেশি তথ্যনিষ্ঠ এবং ঐতিহাসিক গুণে সমৃদ্ধ। প্রাথমিক ভাবে কলেজের ওয়েবসাইট এবং ইউটিউবে প্রদর্শনীটি দেখা যাচ্ছে। মূলত স্থিরচিত্রের সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজ়িক দিয়ে ওই প্রদর্শনী সাজানো হয়েছে।
কলেজ সূত্রের খবর, কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেই সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে প্রদর্শনী করার পরিকল্পনা করেছিলেন অধ্যক্ষা অর্পিতাদেবী। সহ-অধ্যক্ষ সুপ্রতিম দাস এবং ইতিহাস বিভাগের শিক্ষিকা শ্রীময়ী গুহঠাকুরতা যুগ্ম ভাবে প্রদর্শনীটির ‘চিত্রনাট্য’ রচনা করেছেন। সুরারোপ করেছেন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষিকা মধুমঞ্জরী মণ্ডল। সুপ্রতিমবাবু বলেন, ‘‘এই নথিগুলি কলেজের নিজস্ব সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগার থেকে নেওয়া হয়েছে। এই নথি সংক্রান্ত গবেষণায় গ্রন্থাগারিক মানসী গুহের অবদান অনস্বীকার্য।’’ তিনি জানান, তড়িঘড়ি করে প্রদর্শনীটির আয়োজন করা হয়েছে। তবে ইতিমধ্যেই নেট দুনিয়ায় প্রশংসিত হয়েছে তাঁদের উদ্যোগ। অনেকেই ইমেলে কলেজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অদূর ভবিষ্যতে কোনও বাচিক শিল্পীকে দিয়ে কণ্ঠস্বর আরোপ করিয়ে প্রদর্শনীটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার পরিকল্পনাও আছে।