প্রতীকী ছবি।
আবাসনের সামনে উপুড় হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক প্রৌঢ়ার দেহ। যা দেখে প্রতিবেশীরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করায় ছুটে আসেন আবাসনের বাসিন্দারা। জানা যায়, ওই আবাসনেরই তিনতলায় থাকতেন সেই প্রৌঢ়া। তাঁর মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত করছে।
পুলিশ জানায়, ঘটনাটি ঘটেছে বেলেঘাটা থানা এলাকার হরমোহন ঘোষ লেনের একটি চারতলা আবাসনের সামনে। ওই প্রৌঢ়ার নাম অঞ্জলি দে (৬৩)। তিনি আবাসনে মেয়ে সুমিতা বসু, জামাই দেবাশিস বসু এবং নাতির সঙ্গে থাকতেন।
শনিবার সকাল ৮টা নাগাদ বহুতলের সামনের চাতালে তাঁর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের সদস্যদের আগে স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রৌঢ়াকে ওখানে পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁরাই খবর দেন থানায়। বেলেঘাটা থানার পুলিশ এসে দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে যায়।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, প্রৌঢ়ার সঙ্গে বেশ কয়েক দিন ধরেই তাঁর মেয়ের অশান্তি চলছিল। কয়েক দিন আগে যা চরমে ওঠে। পুলিশের দাবি, ওই প্রৌঢ়া এক দিন বাড়ি থেকে বেরিয়েও গিয়েছিলেন। ফিরে এলেও মেয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি বলেই পুলিশ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে।
প্রতিবেশীরাও পুলিশকে জানিয়েছেন, মা-মেয়ের গোলমাল চলছিল। মৌমিতা গুঁই নামে এক আত্মীয়ার অভিযোগ, অঞ্জলিদেবীর উপরে মানসিক অত্যাচার করতেন পরিবারের সদস্যেরা। প্রৌঢ়া এ নিয়ে তাঁদের কাছে অনুযোগ করেছিলেন বলেও দাবি মৌমিতার। তবে এ দিন সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রৌঢ়ার মেয়ে-জামাই দাবি করেন, তাঁরা কোনও রকম অত্যাচার করেননি। মৃতার জামাই দেবাশিস বসু বলেন, ‘‘১৩ বছর ধরে আমার স্ত্রী মাকে দেখছেন। অভিযোগ ঠিক নয়।”
এ দিন বেলেঘাটা থানার পুলিশ প্রৌঢ়ার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। পুলিশ সূত্রের খবর, পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, তাঁরা সকালে ঘুম থেকে উঠে শোনেন, নীচে চেঁচামেচি হচ্ছে। ফ্ল্যাটের মূল দরজা খোলা। পরে তাঁরা ঘটনার কথা জানতে পারেন। পুলিশ জানিয়েছে, সকালে ছাদে যাওয়ার অভ্যাস ছিল অঞ্জলিদেবীর। তদন্তকারীরা জানান, ঘরের ভিতরেও রক্তের দাগ মিলেছে। উদ্ধার হয়েছে একটি ব্লেড। প্রৌঢ়ার বাঁ হাতের কব্জিতে একটি ক্ষতচিহ্ন ছিল। সন্ধ্যায় ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা
যায়, উঁচু থেকে পড়েই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তবে কী ভাবে তিনি পড়লেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দেহের আঘাত তাঁর নিজের করা বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে দেহটি পড়ে ছিল, সেই জায়গা কাঠ দিয়ে ঘিরে দিয়েছে পুলিশ। আশপাশে রক্তের চিহ্ন রয়েছে। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, তদন্তে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।