water logging

LifeBoat - Water logging: লাইফবোট কিনে রেখেছি, তাতেও রক্ষা হবে কি

আমাদের বাড়ি আমহার্স্ট স্ট্রিট সংলগ্ন বিদ্যাসাগর স্ট্রিটে। জল জমার জন্যই এই এলাকা কুখ্যাত।

Advertisement
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২১ ০৫:৫২
Share:

আপৎকালীন: থইথই রাস্তায় লাইফবোট চালিয়ে মহড়া দিচ্ছেন শুভাশিস। নিজস্ব চিত্র

বাবার বাইপাস সার্জারি হয়েছে। গত কয়েক মাসে তাঁকে তিন বার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। মায়েরও বয়স হয়েছে। জরুরি সময়ে হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হলে তো গাড়ি পাব না। অ্যাম্বুল্যান্সও ডাকলে আসবে না। তাই এ বার একটা লাইফবোট কিনে ফেলেছি। কিন্তু তাতেও কত দূর সুরাহা হবে, জানি না। তা ছাড়া, আমি পারলেও আমার প্রত্যেক প্রতিবেশী তো লাইফবোট কিনে রাখার মতো অবস্থায় না-ও থাকতে পারেন! এমন টানা জল-যন্ত্রণা থেকে আমরা মুক্তি পাব কবে?

Advertisement

আমাদের বাড়ি আমহার্স্ট স্ট্রিট সংলগ্ন বিদ্যাসাগর স্ট্রিটে। জল জমার জন্যই এই এলাকা কুখ্যাত। জন্ম থেকে দেখছি, বৃষ্টি হলেই আমাদের এলাকা ভাসে। কিন্তু আগে যতই বৃষ্টি হোক, তিন-চার ঘণ্টায় জল নেমে যেত। এখন টানা দেড় দিন বা কখনও কখনও দু’দিনেও জল নামছে না। নিজেদের বাড়ি-ঘর রাস্তা থেকে উঁচু করে নেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের নেই, তাঁদের জীবন আরও দুর্বিষহ। খাট, আলমারি, রান্নার সামগ্রী— সবই জলে ভাসছে। এই সময়ে না আসেন কাজের লোকেরা, না বসে বাজার। করোনার মধ্যে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল।

আমার বাবা প্রবীরকুমার পালের বয়স ৬৩। মা সুতপা পালেরও ৫২ হয়ে গিয়েছে। আমাদের দোতলা বাড়ির নীচের তলাটা ব্যবসার কাজে ব্যবহার করা হয়। উপরের তলায় আমরা থাকি। কিন্তু বর্ষা এলেই নীচের তলার সব কিছু টেনে উপরে নিয়ে যেতে হয়। কারণ, ঘরে জল ঢুকে যায়। গত নভেম্বরে বাবার করোনা হয়েছিল। তাঁর বহু দিনের ডায়াবিটিস। ইএম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু করোনা ছাড়লেও তাঁর হার্টে ব্লকেজ দেখা দেয়। গত ১৩ মে বাইপাসের ওই বেসরকারি হাসপাতালেই বাবার অস্ত্রোপচার হয়।

Advertisement

১২ মে কলকাতায় প্রবল বৃষ্টি হয়। পরের দিন সকাল ন’টায় বাবার অস্ত্রোপচার। আমাদের একতলার ঘর জলমগ্ন। রাস্তা জলে ডুবে। আমার মা গলা পর্যন্ত ডোবা জল ঠেঙিয়ে কোনও মতে হাসপাতালে যান। ওই বয়সে কোনও ভাবে গর্তে বা অন্য কিছুতে পা পড়লে কী হত?

কয়েক দিন বাদে বাবা বাড়ি ফিরলেন। তখনও তাঁর বুকে আট ইঞ্চি কাটা জায়গায় ব্যান্ডেজ করা। দু’পায়েও ছ’ইঞ্চি করে কাটা জায়গায় ব্যান্ডেজ। বাবা বাড়ি ফেরার কয়েক দিনের মধ্যেই ফের বৃষ্টি হল। এ বার জমা জলের বিপদ সামলাতে আমাদের গোটা এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হল। অস্ত্রোপচার হওয়া রোগী গরমে কেমন কষ্ট পেতে পারেন দেখেছি। ওর মধ্যেই বাবার শরীর খারাপ হয়ে পড়ল। ফের তাঁকে ইএম বাইপাসের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হল। চিকিৎসকেরা জানালেন, ড্রেসিং ঘামে ভিজে সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে। পটাশিয়ামেরও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

জল-যন্ত্রণার মধ্যে তবু কোনও মতে চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনে যে ভাবে দফায় দফায় জল দাঁড়িয়েছে, তাতে জরুরি সময়ে কী হবে ভেবেই ভয় করছে। আকাশে মেঘ জমতে দেখলেই বুক ধড়ফড় করে এখন। একটি অনলাইন সংস্থা থেকে চার হাজার টাকায় কেনা ওই লাইফবোট কতটা রক্ষা করতে পারবে, জানি না। রক্ষা পাওয়ার অন্য কোনও উপায়ও তো আপাতত দেখছি না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement