সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

রাজাহীন রাজসভায় হাসি-গল্পে ‘লিয়ার’ স্মরণ

শনিবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্রসদনে সৌমিত্র-স্মরণসভা সে-ই প্রশ্নই উস্কে দিল। ‘‘রাজা লিয়ারের সময়ে আমাদের হাতে প্রযুক্তির সব সুবিধা ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:১৩
Share:

স্মৃতি: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মরণসভা উপলক্ষে তাঁর ছবি ও পোশাকে সাজানো হয়েছে রবীন্দ্র সদন। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সিনেমার অভিনয়, লেখালিখির অনেকটাই থেকে যাবে। কিন্তু মঞ্চে তাঁর দাপুটে উপস্থিতির কতটুকু থাকবে? সৌমিত্রের থিয়েটার কেমন ছিল, কী ভাবে বুঝবে আগামীর প্রজন্ম?

Advertisement

শনিবার সন্ধ্যায় রবীন্দ্রসদনে সৌমিত্র-স্মরণসভা সে-ই প্রশ্নই উস্কে দিল। ‘‘রাজা লিয়ারের সময়ে আমাদের হাতে প্রযুক্তির সব সুবিধা ছিল। তবু সৌমিত্রদার অবিস্মরণীয় অভিনয়ের একটাও ভিডিয়ো রেকর্ডিং নেই। এটা অপরাধ।’’— বললেন লিয়ারের পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়।

হলে ঢোকার মুখে সাজানো নীলকণ্ঠ, হোমাপাখি, ফেরা, ঘটকবিদায়, লিয়ারে নট সৌমিত্রের পোশাক। মঞ্চে ছবি নেই তাঁর। বদলে ‘রাজা লিয়ার’ নাটকের শূন্য সিংহাসন। তাতে লিয়ারেরই রাজমুকুট। সেই শূন্য সিংহাসনকে ঘিরেই ‘সভাসদ’দের নিয়ে ‘সৌমিত্রের দরবার’। মঞ্চ-পর্দায় সৌমিত্রের সঙ্গী রবি ঘোষ, অনুপকুমারদের মতো সমসাময়িক বন্ধুদের বেশির ভাগই প্রয়াত, কোভিড-পরিস্থিতিতে প্রবীণ স্বজনেরাও অনেকে আসেননি। তার বদলে, ‘লিয়ারে’র রাজসভায় সৌমিত্রের হাঁটুর বয়সি, স্নেহভাজন গুণিজনই রয়েছেন। তবু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তো নিছকই একটা যুগের মানুষ নন! অনেক ছোটদেরও তিনি বন্ধু! এই স্মরণসভা সেটাও মনে করিয়ে দিল।

Advertisement

‘ফেরা’য় অভিনেতা সৌমিত্রকে নিয়ে সৌমিত্র-কন্যা তথা নাট্যপরিচালক পৌলমীর সঙ্কটের কথা শোনাচ্ছিলেন দেবশঙ্কর হালদার। বাবার মেক-আপ ঠিক করতে করতে পরিচালক-মেয়ের হতাশা, ‘বাপি তুমি এত সুন্দর কেন বল তো, কিছুতেই দেখতে খারাপ করা যাচ্ছে না!’ পরে দেবশঙ্করকে সহাস্যে সৌমিত্র বলেছেন, ‘দেখতে খারাপ লাগার জন্য, মেক আপের উপরেই নির্ভর করতে হবে আমায়! তা হলে অভিনয়টা কেন?’ কৌশিক সেনের মনে পড়ছিল, ‘টিকটিকি’র একটি দৃশ্যে তিনি পড়ে যাওয়ার পরে তাঁকে ডিঙিয়ে বেরোতে হত সৌমিত্রকে। সৌমিত্রের পা গায়ে লাগত এবং রোজই অস্ফূটে ‘সরি’টি তিনি বলবেনই!

‘শ্যামবাজার মুখোমুখি’ নাট্যদলের ডাকে স্মরণ-পর্ব শোকে ভারাক্রান্ত হোক, চাননি আহ্বায়ক পৌলমী। চিকিৎসক সুনীত চক্রবর্তী শোনালেন, এক বাধ্য রোগীর কথা! কোনও পরীক্ষা করাতে ভয় পেলে, যাঁকে অনায়াসে ‘ফেলুদা ভয় পাচ্ছে, এ আবার কী’ও বলা যেত। চিকিৎসক রামেন্দু হোমচৌধুরীর স্মৃতিতে, থ্যালাসেমিয়া-সচেতনতায় দিকপাল শিল্পীর দায়বদ্ধতা। সৌমিত্র মিত্র, অতনু ঘোষ, লোপামুদ্রা মিত্রদের স্মৃতিতে নিরভিমান সৌমিত্র। ‘দাদাসাহেব ফালকে’ নিতেও ইকনমি ক্লাসেই যাঁর দিল্লি পাড়ি। বিলু দত্ত, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, উপল সেনগুপ্ত, শ্রীজাত, শ্রীকান্ত আচার্যের স্টকে মজাদার সব গল্প। এন্তার পার্ট করা এক অভিনেতাকে বলছেন, জীবজন্তুদের চ্যানেলে জলহস্তি দেখে ভাবলাম ওটা তুমি! সংবর্ধনার ফুলের পাহাড় দেখে টিপ্পনী, ইস কুমড়োফুল-বকফুল হলে ভেজে খাওয়া যেত।

সন্ধ্যার বিশেষ প্রাপ্তি, বাবার স্মরণে সৌমিত্র-পুত্র সৌগতের কবিতা। এবং সৌমিত্র-জায়া দীপা চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতি। বন্ধু খুকুর মেজদা সৌমিত্রের সঙ্গে প্রথম আলাপের দিনগুলোয় বিভোর ৬১ বছরের দাম্পত্য পার করা জীবনসঙ্গিনী। মঞ্চে ভাল চরিত্র করতে এবং বাংলা ভাষায় সংলাপ বলতে আকুল, এক শিল্পীর ছায়াও সারা ক্ষণ জুড়ে থাকল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement