বাণিজ্যিক কাজে মোটরবাইক ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স মেলে না! বদলে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলে ‘রেটিং’ বাড়ানোর ঝুঁকির বাইক-যাত্রা। ফাইল ছবি।
বছরের পর বছর প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা হয়, বাস্তবে কিছু বদলায় না। অভিযোগ, বাণিজ্যিক কাজে মোটরবাইক ব্যবহারের জন্য (কমার্শিয়াল ভেহিক্ল) লাইসেন্স মেলে না! বদলে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলে ‘রেটিং’ বাড়ানোর ঝুঁকির বাইক-যাত্রা। তবে পরিবহণ দফতরের উদ্যোগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই মোটরবাইকের বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই মতো গত বৃহস্পতিবার থেকে বেলতলায় আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের (আরটিও) অফিসে শুরু হয়েছিল লাইসেন্সের জন্য নাম নথিভুক্তিকরণ। যদিও শুরুর দিন দুয়েকের মধ্যেই এমন উদ্যোগ প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে। ফলে, লাইসেন্স পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা জাগছে।
সূত্রের খবর, মোটরবাইকের বাণিজ্যিক লাইসেন্সের জন্য মূলত দু’ধরনের পারমিট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে পরিবহণ দফতর। একটি ক্ষেত্রে, ১০০০ টাকার বিনিময়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য কোনও একটি জেলা এবং সেই সংলগ্ন আরও চারটি জেলা মিলিয়ে মোট পাঁচটি জায়গার পারমিট মিলবে। অন্য ক্ষেত্রে, ২০০০ টাকার বিনিময়ে পাঁচ বছরের জন্য পাওয়া যাবে এমন পারমিট, যা সমগ্র রাজ্যে প্রযোজ্য হবে। এর জন্য আরটিও অফিসে গিয়ে আবেদন করার খরচ বাবদ ১০০ টাকা এবং অন্যান্য কিছু খরচ মিলিয়ে দিতে হবে মোট ১৪০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার থেকে সেই মতোই আবেদন করার কাজ চলছিল।
কিন্তু সমস্যা শুরু হয় প্রক্রিয়ার একটি ধাপে পৌঁছে। এক বাইক-ট্যাক্সির চালক বলেন, ‘‘আবেদন করার সময়ে কাউন্টারে ব্যাঙ্কের এনওসি চাওয়া হয়। কারণ, আমি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনেছি। ব্যাঙ্ক এনওসি না দিলে কিছুই হবে না বলেও জানানো হয়। আরব্যাঙ্কও জানিয়ে দেয়, ঋণ শোধ না হওয়া পর্যন্ত এনওসি দেওয়া সম্ভব নয়।’’ অথচ এমন মোটরবাইকের বেশির ভাগই ধারে কেনা বলে জানা যাচ্ছে। দীপম কর্মকার নামে আরএক বাইক-ট্যাক্সির চালক বললেন, ‘‘গত বৃহস্পতিবার থেকে ব্যাঙ্কে ছুটছি। ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, কমার্শিয়াল ভেহিক্ল হিসাবে রেজিস্ট্রেশন করা মানে তো গাড়ির নম্বর প্লেটের পাশাপাশি নম্বরও বদলে যাবে। তখন ব্যাঙ্ক হিসাব রাখবে কী ভাবে?’’
‘কলকাতা সাবার্বান বাইক-ট্যাক্সি অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর সভাপতি শান্তি ঘোষ জানাচ্ছেন, এমনিতেই নানা বঞ্চনার মধ্যে কাজ করতে হয় বাইক-ট্যাক্সি চালকদের।সংস্থাগুলি তাঁদেরকে পার্টনার হিসেবে দেখায়, অথচ লভ্যাংশ দেয় না। শ্রমিকের স্বীকৃতি দেওয়া হয় না, কারণ তা হলে সেই অনুযায়ী প্রাপ্য দিতে হবে। অল্প টাকায় কাজ করতে গিয়ে মাথায় চাপ থাকে রেটিং ভালরাখার। নয়তো পেমেন্ট কমে যাবে। শান্তি বলেন, ‘‘ভাল রেটিং পেতে অনেক সময়েই ঝুঁকি নিয়ে মোটরবাইক ছোটাতে হয়। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। ওঁদের ন্যায্য পাওনা দিলে বহু দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে সব চেয়ে বড় সমস্যা ব্যাঙ্কের এনওসি।’’
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক বললেন, ‘‘ঋণ করে কেনা গ্রাহকের গাড়ি বা মোটরবাইকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ধরেই হিসাবরাখে ব্যাঙ্ক। ওই নম্বর গ্রাহকের অন্যতম পরিচয়। ঋণখেলাপির ক্ষেত্রে ওই নম্বর ধরেই পদক্ষেপ করা হয়। কোনও ব্যাঙ্ক সেই কারণে পুরো ঋণ শোধ না করা পর্যন্ত এনওসি দিতে পারে না। গাড়ির হাতবদলের ক্ষেত্রেও পুরো ঋণ মিটিয়ে এনওসি নিয়ে হাতবদল করতে হয়।’’ যদিও রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যে সমস্ত ব্যাঙ্ক এনওসি দিতে চাইছে না, তাদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। ওই সমস্ত ব্যাঙ্ক ধরে ধরে সরকারের তরফে কথা বলা হবে।’’