Unnatural Death

সম্পর্কের টানাপড়েনেই কি হাতুড়ি মেরে খুন ট্যাংরার বাসিন্দা ঝুন্নুকে?

তদন্তে নেমে পুলিশের নজর গিয়েছিল, তিলজলা থানার কাছেই রব্বানিদের ফ্ল্যাটে। ঝুন্নু নিখোঁজ হওয়ার পরেই আচমকা ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া দিয়ে রব্বানি তার স্ত্রী আয়েশা নুরকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ০৬:১৩
Share:

ঝুন্নু রানা। ফাইল ছবি।

সম্পর্কের টানাপড়েনেই কি খুন হতে হয়েছে ট্যাংরার বাসিন্দা, বছর চৌত্রিশের ঝুন্নু রানাকে? এইঘটনায় ধৃত চার জনকে দফায় দফায় জেরা করে এমনই ধারণা হয়েছে তদন্তকারীদের। যদিও এই মৃত্যুর একাধিক দিক এখনও অজানা তাঁদের কাছে। শনিবার রাত পর্যন্ত মেলেনি মৃতদেহটি। ফলে দেহের কী হল, তা নিয়েও রহস্য কাটেনি। তবে তদন্তকারীরা এক প্রকার নিশ্চিত যে, ধৃত গোলাম রব্বানির ফ্ল্যাটেই হাতুড়ি মেরে খুন করা হয়েছে ঝুন্নুকে।

Advertisement

তদন্তে নেমে পুলিশের নজর গিয়েছিল, তিলজলা থানার কাছেই রব্বানিদের ফ্ল্যাটে। ঝুন্নু নিখোঁজ হওয়ার পরেই আচমকা ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া দিয়ে রব্বানি তার স্ত্রী আয়েশা নুরকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। সন্দেহ আরও বাড়ে তিন কামরার ওইফ্ল্যাটের একটি ঘরের এক দিকের দেওয়ালের রং সবুজ এবং অন্যদিকের লাল রং দেখে। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, অপটু হাতে তড়িঘড়ি সেই রং করা হয়েছে। তল্লাশি চলাকালীন পুলিশ দেখে, সিলিংয়ে রক্তের ছিটে লেগে। সেই সঙ্গে সন্দেহ বাড়ে, দম্পতির ফ্ল্যাট ছাড়া নিয়েও। একাধিক সিম কার্ড বদল করেও এর পরে শেষরক্ষা হয়নি। কলকাতা পুলিশের বিশেষ বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যায় ওই দম্পতি।

গত ৩ মার্চ নিখোঁজ হন ঝুন্নু। তাঁর পরিজনেরা ট্যাংরা থানায় নিখোঁজডায়েরি করেন। তাঁদের অভিযোগ, দোল মিটলে বিষয়টি দেখা হবে বলেজানিয়ে দেয় পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার থানা ঘেরাও করে প্রতিবেশীরা বিক্ষোভ দেখালে বিষয়টি সামনে আসে। তড়িঘড়ি পুলিশের তরফে জানানো হয়, এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে গোলাম রব্বানি (২৫) নামে এক যুবক ও তার স্ত্রী আয়েশা নুরকে (২৩)। ঝুন্নু নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন থেকেই তাদের খোঁজ ছিল না বলে স্থানীয়দের দাবি। শুক্রবার গ্রেফতার করা হয় রব্বানির মামা শেখ রিয়াজ এবং ভাই ইমরানকে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতায় নিয়ে আসার পরে জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, কয়েক মাস আগেই পরিচয় হয় ঝুন্নু এবং রব্বানির। তার পর থেকে রব্বানির ফ্ল্যাটে যাতায়াত ছিল ঝুন্নুর। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, রব্বানির স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। এই ঘটনায় সম্পর্কের টানাপড়েনের বিষয়ও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের ব্যাপার ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্য একটি সূত্র এ-ও জানাচ্ছে, রব্বানির স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন ঝুন্নু। সেই রাগ থেকেই কি তবে ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে তাঁকে খুন করেছে রব্বানি?

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ৩ মার্চ ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে মাথায় হাতুড়ি মেরে খুন করা হয় ঝুন্নুকে। ৪ মার্চ ভোরের দিকে ঝুন্নুর দেহটি একটি ড্রামে ভরে সাইকেল ভ্যানে চাপিয়ে আম্বেডকর সেতু থেকে খালে ফেলে দেওয়া হয়। এই কাজে সাহায্য করে রিয়াজ।ঝুন্নুর দেহ খালে ফেলে রব্বানি এবং তার স্ত্রী সাঁতরাগাছি থেকে ট্রেনে খড়্গপুর যায়। সেখান থেকে ভুবনেশ্বর, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ এবং শেষে দিল্লি যায় তারা।

তবে শনিবার রাত পর্যন্ত খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র এবং মৃতদেহ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘খালের উপরে ড্রোন উড়িয়েও দেখা হচ্ছে। কিছু জিনিস মিলেছে, সেগুলি মৃতদেহের সঙ্গে ছিল কি না, জানতে পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement