প্রতীকী ছবি।
স্ত্রীকে কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ। স্ত্রী ভেবেছিলেন, প্রতিদিনের মতোই আবাসনের বাইরে হাঁটতে গিয়েছেন তাঁর স্বামী। কিন্তু রাতে মূল গেটে তালা পড়াই পরেই উপর থেকে ভারী কিছুর নীচে পড়ার বিকট আওয়াজে চমকে ওঠেন সকলে। কেয়ারটেকার ছুটে গিয়ে দেখেন, আবাসনের চাতালে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ওই বৃদ্ধ।
বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বালিতে। পুলিশ জানায়, পাঁচতলা আবাসনের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় (৬৯) নামে ওই বৃদ্ধের। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জেনেছেন, বেশ কিছু দিন ধরে পারিবারিক কিছু বিষয়ে মানসিক অশান্তিতে ভুগছিলেন ওই বৃদ্ধ। তিনি ছাদের যে জায়গা থেকে নীচে পড়েছেন, সেখানে নিজে থেকে না গেলে কারও পড়ে পৌঁছনো সম্ভব নয়। তা থেকেই প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, স্বপনবাবু আত্মঘাতী হয়েছেন। তবে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, বালির ডক্টর এ এন পাল লেনের ওই পাঁচতলা আবাসনের একতলায় স্ত্রী ডলি বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে থাকতেন স্বপনবাবু। ওই দম্পতির দুই মেয়েরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্বপনবাবু এক সময়ে একটি সিগারেট প্রস্তুতকারী সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে তাঁর ডান চোখটি নষ্ট হয়ে যায়। বাঁ চোখেও ঝাপসা দেখতেন। তবে প্রতিদিন সকালে ও রাতে আবাসন চত্বরে কিংবা সামনের রাস্তায় হাঁটতেন। ওই দিন রাত ৮টা নাগাদ ডলিদেবীকে কিছু না বলেই ফ্ল্যাট
থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ। ডলিদেবী বলেন, ‘‘ভাবলাম, হাঁটতে গিয়েছেন। কিন্তু রাত ১১টা বেজে গেলেও ফিরছেন না দেখে চিন্তায় পড়ে যাই। আচমকা বিকট আওয়াজ শুনলাম। তার পরেই কেয়ারটেকার এসে খবর দিলেন।’’
ওই আবাসনের কেয়ারটেকার অমল রায় জানান, ১১টা নাগাদ তিনি মূল গেটে তালা দিয়ে ভিতর দিকে যাওয়ার মিনিট ১৫ পরেই আওয়াজ শুনে বেরিয়ে আসেন। দেখা যায়, আবাসনের সামনের চাতালেই মাথা থেঁতলে পড়ে রয়েছেন স্বপনবাবু। চার দিক রক্তে ভাসছে। অমলবাবুই সকলকে ডেকে আনেন। খবর পেয়ে বালি থানার পুলিশ গিয়ে দেহটি তুলে বেলুড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসকেরা বৃদ্ধকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই দম্পতির ছোট মেয়ে মধ্যপ্রদেশে থাকেন। তাঁর স্বামী কিছু দিন ধরে মানসিক রোগে আক্রান্ত, চিকিৎসা চলছে। ছোট মেয়ে গত ২২ জানুয়ারি বালি থেকে মধ্যপ্রদেশে ফিরে যান। তার পর থেকেই সব সময়ে মনমরা হয়ে থাকতেন স্বপনবাবু। সকালে উত্তরপাড়ায় বড় মেয়ের কেকের দোকানে গিয়ে বসতেন।
পুলিশ জানায়, ওই আবাসনের ছাদের সীমানা পাঁচিলটি খুবই ছোট। সেখানে কয়েক দিন আগে একটি অনুষ্ঠানের মণ্ডপ হয়েছিল। যে জায়গা থেকে বৃদ্ধ নীচে পড়েছেন, সেখানে এখনও বাঁশের কাঠামো রয়েছে। সেটি টপকেই সম্ভবত নীচে ঝাঁপ দেন তিনি।