পঞ্চসায়রের এই বাড়িতেই ভাড়া থাকতেন কণাদ চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।
চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত সন্দেহে এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু ‘জেরা’ এড়াতে বিষাক্ত কোনও তরল খেয়ে ফেলায় মৃত্যু হল সেই ব্যক্তির। শনিবার বিকেলে, পূর্ব যাদবপুরের ওই যুবকের মৃত্যুর ঘটনার পরে এমনই দাবি করেছে লালবাজার। যদিও এই ঘটনায় একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে পুলিশকর্মীরা সাদা পোশাকে গিয়েছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। সে ক্ষেত্রে কোনও পুলিশকর্মী কেন উর্দি পরে ছিলেন না? নিয়ম মতো তা হলে তো সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীর নাম-পরিচয় জানতেই পারবেন না অভিযুক্তের পরিবারের লোকজন। আরও প্রশ্ন, কেন নোটিস পাঠিয়ে থানায় ডেকে আনার বদলে বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন পড়ল? লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার যদিও দাবি, ‘‘গোটা বিষয়টাই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, পূর্ব যাদবপুরের পঞ্চসায়রে শতাব্দী পার্কের এই ঘটনায় মৃতের নাম কণাদ চক্রবর্তী (৪৩)। পুলিশ সূত্রের খবর, গয়না চুরির তদন্তে এ দিন কণাদের ভাড়াবাড়িতে পৌঁছয় পুলিশ। পুলিশের দাবি, বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময়ে আচমকা কণাদ অন্য ঘরে ঢুকে যান। এর পরেই পুলিশ জানতে পারে, সেখানে বিষাক্ত কোনও তরল খেয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়েছেন তিনি। তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুর কারণ জানতে দেহ ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। তবে শরীরে বাইরে থেকে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না বলেই জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, কণাদকে গ্রেফতার করার আগেই ওই কাণ্ড ঘটান তিনি। ইতিমধ্যেই ঘরটি তালাবন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই তেতলা বাড়ির একতলায় ১৭ মার্চ থেকে ভাড়া থাকছিলেন কণাদ। সঙ্গে থাকেন তাঁর পিসি রীতা চক্রবর্তী। উপরের দু’টি তলায় সপরিবার থাকেন বাড়ির মালিক চিত্তরঞ্জন সাহা। তিনি জানান, কণাদ বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন বলে জানিয়েছিলেন। মালিকের দাবি, এ দিন সকালে এক ব্যক্তি এসে নানা প্রশ্ন করার অছিলায় বাড়ি দেখে যান। তখন তাঁর পরিচয় জানতে পারেননি। বিকেলে চার জন ফের আসেন ও পুলিশকর্মী বলে পরিচয় দেন। তখন মালিকের পুত্রবধূ বর্ণালী সাহা জানতে পারেন, সকালে পুলিশেরই এক জন এসেছিলেন। তাঁরা জানান, গয়না চুরি করে পালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত কণাদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছেন। বাড়ির মালিক বলেন, ‘‘এর পরে দেখি, এক জন কণাদের ঘরে ঢুকলেন। এক জন পাশের সিঁড়িতে দাঁড়িয়েছিলেন। বাকি দু’জন বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করছিলেন।’’ তিনি জানান, পুলিশের সঙ্গে কথা চলাকালীন কণাদ কিছু খান। এর পরেই তাঁকে ধরাধরি করে পুলিশ গাড়িতে তোলে।
ঘটনার সময়ে কণাদের বাড়িতে আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর পিসি রীতা একটি বিউটি পার্লারে কাজ করেন। এ দিন রাতের দিকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘ওখানে কী ঘটেছিল, বলতে পারব না। কারণ বাড়িতে ছিলাম না। ভাইপোর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগের কোনও কথা আমার জানা নেই।’’
অতীতে একাধিক ঘটনায় পুলিশি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যার মধ্যে হেফাজতে মৃত্যুও আছে। রাতে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনাতেও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল। আইনজীবীরা যদিও জানাচ্ছেন, জিজ্ঞাসাবাদ বা থানায় ডেকে এনে জেরার ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালতের একাধিক নির্দেশিকা রয়েছে। সাত বছরের কম হাজতবাসের সাজা রয়েছে, এমন অপরাধের ক্ষেত্রে কখনওই নোটিস পাঠিয়ে ডাকার বদলে ‘তুলে এনে’ জেরা করা যায় না। এমনকি, পুলিশকর্মীদের নির্দিষ্ট উর্দিতে থাকা বাধ্যতামূলক। পোশাকে স্পষ্ট ভাবে নাম উল্লেখ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে সে সব ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।