ললিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল।
এ বার কোভিড রোগীদের থাকা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে ললিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে। আপাতত ২০০ জনের জন্য এই ব্যবস্থা করেছেন আমরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২৪ ঘণ্টার জন্য চিকিৎসক, নার্স-সহ সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা মিলবে ১৮০ বছরের পুরনো এই বিলাসবহুল হোটেলে।
আমরি হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ এলেও অনেকেরই কোনও উপসর্গ থাকে না। অনেকের আবার মৃদু উপসর্গ থাকে। সেই সব রোগীদের বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করা সম্ভব। কিন্তু ওই রোগীদের অনেকেই বাড়িতে থাকতে চান না। সর্ব ক্ষণের জন্য চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকতে চান। চিকিৎসা পরিষেবার আওতায় থাকতে চান। অনেকে আবার বাড়িতে থাকতে ভয় পাচ্ছেন, দেখাশোনার কেউ নেই। বা নিভৃতবাসের মতো জায়গাও বাড়িতে নেই। অনেকের হয়তো ‘কো-মর্বিডিটি’ও রয়েছে। আমরি হাসপাতালের গ্রুপ সিইও রূপক বড়ুয়া জানালেন, এই ধরণের কোভিড আক্রান্তদের কথা মাথায় রেখেই তাঁরা ললিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে ‘স্যাটেলাইট সেন্টার’ তৈরি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে সর্ব ক্ষণের জন্য চিকিৎসক এবং নার্স থাকবেন। রোগীদের সর্ব ক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। অক্সিজেনের ব্যবস্থাও থাকবে। থাকবে খাওয়াদাওয়া, ওষুধপত্র, চিকিৎসা ব্যবস্থা।’’ তিনি জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে সিঙ্গল রুমের জন্য দৈনিক খরচ পড়ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। ডাবল রুম শেয়ার করলে খরচ দিনে ৫ হাজার টাকা।
অকল্যান্ড হোটেল হিসাবে আজকের গ্রেট ইস্টার্নের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯ নভেম্বর, ১৮৪১ সালে। তৎকালীন ‘গভর্নর জেনারেল অব ইন্ডিয়া’র উপাধির থেকে নেওয়া নামে। পরে সেই নাম বদলে হয় গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল। ‘জুয়েল অব ইস্ট’, ‘স্যাভয় অব দ্য ইস্ট’ নামে এই হোটেলের কথা সাহিত্যেও ঠাঁই পেয়েছে। উনবিংশ শতকের ব্রিটিশ লেখক রুডইয়ার্ড কিপলিং তাঁর ‘সিটি অব ড্রেডফুল নাইট’-এ এই হোটেলের উল্লেখ করেছেন। স্বাধীনতার পরে রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করছিল এই হোটেলটি। ২০০৫ সালে বেসরকারিকরণের পর আট বছরেরও বেশি সময় সংস্কারের জন্য বন্ধ ছিল গ্রেট ইস্টার্ন। পরে ২০১৪ সালে নব সংস্করণে ললিত গ্রেট ইস্টার্ন পথ চলা শুরু করে। করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় এ বার সেই গ্রেট ইস্টার্নই কোভিড সেন্টার।
কলকাতায় আমরির তিন হাসপাতালে ৬০০ জন কোভিড রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রূপক। কিন্তু প্রতি দিন যে ভাবে কোভিড রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে চাহিদা বাড়ছে হাসপাতালে শয্যারও। সেই কারণে এখনও পর্যন্ত শহরের ৫টি হোটেলে ‘স্যাটেলাইট সেন্টার’ করা হয়েছে। সল্টলেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘ফিল্ড হাসপাতাল’ও তৈরি করেছে আমরি। সেখানে ২৫০ জনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রেট ইস্টার্নে মৃদু এবং উপসর্গহীনদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলেও সল্টলেক স্টেডিয়ামে প্রাথমিক জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।