ফাইল ছবি
রাস্তার মোড়ে মোড়ে সিসি ক্যামেরা। কড়া পুলিশি নজরদারি। সচেতনতা বাড়াতে ঘটা করে ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’ পালন। কিন্তু তার পরেও শহরে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েই চলেছে! কাজ হচ্ছে না ট্র্যাফিক আইনভঙ্গে জরিমানার অঙ্ক বাড়ানোর কৌশলেও। রবিবার বিকেলে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ভয়াবহ দুর্ঘটনাই শুধু নয়, গত এক মাসে শহরে পথ দুর্ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যু পথ-নিরাপত্তা নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বেপরোয়া গাড়ির দৌরাত্ম্যকে এত করেও কেন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না, উঠছে সেই প্রশ্নও।
রবিবার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে বেপরোয়া গতিতে এসে একটি বিলাসবহুল গাড়ি প্রথমে এক মহিলা পথচারীকে পিষে দেয়। তার পরে ধাক্কা মারে আরও একটি গাড়িতে। ষষ্ঠী দাস নামে জখম ওই মহিলাকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান। স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্ঘটনার সময়ে বেপরোয়া গাড়িটির গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার। ওই দুরন্ত গতিই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে দাবি তাঁদের।
সেই ঘটনার রেশ কাটার আগেই শহরে ফের দু’টি পৃথক পথ দুঘর্টনায় মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। মঙ্গলবার ভোরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে একটি পণ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক সাইকেল আরোহীর। মৃতের নাম রাজকুমার মাহাতো (৪৭)। আদতে বিহােরর বাসিন্দা রাজকুমার এখানে ছাতুর ব্যবসা করতেন। পুলিশ জানিয়েছে, আর জি কর রোড এবং ক্যানাল সার্কুলার রোডের সংযোগস্থলে তাঁকে পিছন থেকে ধাক্কা মারে একটি লরি। আর জি করে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ লরিচালককে গ্রেফতার করেছে। অপর দুর্ঘটনায় সোমবার প্রগতি ময়দান থানা এলাকার ধাপা রোডে পুরসভার একটি লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক পথচারীর। তাঁর নাম মঞ্জু ভট্টাচার্য (৪৫)। তাঁর দু’পায়ের উপর দিয়ে লরির চাকা চলে যায়। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হলে পায়ে অস্ত্রোপচার হয়। পুলিশ জানায়, রাতে ধাপা রোডের বাসিন্দা মঞ্জুর মৃত্যু হয়। চিকিৎসকদের অনুমান, অতিরিক্ত রক্তপাতের ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত লরিচালককে গ্রেফতার করেছে।
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, গত এক মাসে কলকাতা পুলিশ এলাকায় পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে ১৫ জনের। আহতের সংখ্যা আরও বেশি। কোথাও বেপরোয়া গতির ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে, কোথাও আবার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ট্র্যাফিক সিগন্যাল না মানার পুরনো রোগ। শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, রাত হলেই ‘জয় রাইড’-এর নামে বেপরোয়া গাড়ির দৌরাত্ম্য কার্যত লাগাম ছাড়ায়। পুলিশি নজরদারি এড়িয়ে একাধিক রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে অনেককে গাড়ি ছোটাতে দেখা যায় বলে অভিযোগ। এ ছাড়া, রয়েছে নজরদারিতে ঢিলেমির মতো অভিযোগও।
কসবার বাসিন্দা অমিয় পাত্র বলেন, ‘‘এত আয়োজনের পরেও যদি মৃত্যু না কমে, তা হলে এ সব করে লাভ কী? কখনও ফুটপাতে গাড়ি উঠে যাচ্ছে, কখনও প্রমোদ-ভ্রমণের নামে বেরিয়ে পথচারীকে পিষে দেওয়া হচ্ছে! কেন এমন ঘটনা থামানো যাচ্ছে না? ট্র্যাফিক পুলিশ কোনও ভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না।’’
অথচ, মাসকয়েক আগে শহরে পথের নিরাপত্তা বাড়াতে ট্র্যাফিক আইনভঙ্গে জরিমানার অঙ্ক বাড়ানো হয়। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কার্যত কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে সেই জরিমানার অঙ্ক। পাশাপাশি, মত্ত চালকদের দৌরাত্ম্য রুখতেও একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার দিয়ে পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়ানো হয়। কিন্তু তার পরেও যে বেপরোয়া গাড়ি রোখা যায়নি, তা প্রমাণ করছে একের পর এক দুর্ঘটনা।
যদিও কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বললেন, ‘‘মৃত্যু কখনওই কাম্য নয়। দুর্ঘটনা এড়াতে ও চালকদের শিক্ষা দিতে তাই পুলিশের তরফে আইনানুযায়ী যতটা কড়া অবস্থান নেওয়া সম্ভব, সেই পথেই হাঁটা হচ্ছে। এমনকি, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে আইনভঙ্গে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।’’