গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
একইদিনে উত্তরের কোচবিহার থেকে দক্ষিণের ঠাকুরনগর। একইদিনে কোচবিহারের রথযাত্রা উদ্বোধন থেকে ঠাকুরনগরে মতুয়া মহাসঙ্ঘের সভায়। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি অমিত শাহের এই সফরসূচিই এখনও পর্যন্ত রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে অমিতের আসার কথা ছিল ৮ এবং ৯ তারিখ। কিন্তু দিল্লির রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য তা পিছিয়ে ১১ তারিখ করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, ওই এক দিনই অমিতের সফর হবে। ৩০ জানুয়ারির সমাবেশের জন্য তৈরি মঞ্চ ভাঙা হয়নি। সেখানেই ‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর নামে সমাবেশ হবে।
৬ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যে ‘পরিবর্তন যাত্রা’ নামে রথ বার করতে চায় রাজ্য বিজেপি। উত্তরবঙ্গে সেই যাত্রা শুরু ১১ ফেব্রুয়ারি। রথযাত্রার সূচনায় কোচবিহারে আসবেন অমিত। সে দিন বিকেলেই ঠাকুরনগরে সভা করবেন তিনি। মঙ্গলবার দিল্লিতে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের বৈঠকের সময়েই জানা গিয়েছিল অমিতের কোচবিহারের কর্মসূচি। পরে ঠিক হয়, উত্তরবঙ্গে সূচনা পর্ব মিটিয়ে ওই দিনই অমিত আসবেন দক্ষিণের ঠাকুরনগরে। বিকেল ৩টে নাগাদ হবে তাঁর ৩০ জানুয়ারির ‘পরিবর্ত সমাবেশ’। এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত নয়। কিন্তু রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, অমিতের সফর যদি একদিন বাড়ে, তা হলে সিঙ্গুরে ১২ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ করতে পারেন শাহ। কারণ, আগে ১১ তারিখ তাঁ সিঙ্গুরে আসার কথা ছিল। সেই সময় নিয়ে নিচ্ছে কোচবিহার এবং ঠাকুরনগর। ফলে সিঙ্গুরের জন্য বাড়তি এক দিনের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া গত্যন্তর নেই রাজ্য বিজেপি-র। প্রসঙ্গত, সিঙ্গুরেই শেষ হবে বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার হাতে গত ৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া রাজ্য বিজেপি-র ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযান’ কর্মসূচি।
নড্ডা ও অমিত অন্যান্য কর্মসূচিতে যোগ দিলেও তাঁদের ফেব্রুয়ারির সফরের মূল কারণ রাজ্য বিজেপির-র প্রস্তাবিত ‘পরিবর্তন যাত্রা’। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব তৃণমূল। বুধবার রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘বিজেপি-র রথযাত্রার প্রবর্তক লালকৃষ্ণ আডবাণী এখন দলের বাইরে। অপমানিত হয়েছেন। অর্থাৎ, যিনি রথ শুরু করেছিলেন, তাঁকেই বিজেপি অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছে। তা হলে রথের মাথায় কে আছেন? রথের দেবতা কে?’’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভক্তিভাজন’ কবিতার ‘পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসে অন্তর্যামী’ পংক্তিটিও উল্লেখ করেন ব্রাত্য।
৩০ জানুয়ারি থেকে অমিত শাহর অপেক্ষায় ঠাকুরনগরের মঞ্চ।
১১ ফেব্রুয়ারি অমিত উত্তরবঙ্গে রথযাত্রার সূচনা করলেও দক্ষিণবঙ্গে রথযাত্রা আগেই শুরু হয়ে যাচ্ছে। আগেই ঠিক ছিল, রাজ্য বিজেপি-র ৫টি সাংগঠনিক জোন থেকে ৫টি রথযাত্রা বেরোবে। মঙ্গলবার দিল্লিতে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বাড়িতে রাজ্য নেতাদের বৈঠকে সেই রথগুলির সূচনায় কোন কেন্দ্রীয় নেতা কবে, কোথায় আসবেন তা-ও চূড়ান্ত হয়েছে। ঠিক হয়েছে, ৬ ফেব্রুয়ারি নড্ডা নবদ্বীপে প্রথম রথটির সূচনা করবেন। ৯ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রাম ও তারাপীঠ থেকে নড্ডা আরও দু'টি এবং ১১ ফেব্রুয়ারি কোচবিহারে অমিত একটি রথযাত্রার সূচনা করবেন। কাকদ্বীপ থেকে কলকাতা জোনের যে রথটি বেরোবে, সেটির সূচনা কবে হবে তা অবশ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি। রাজ্য বিজেপি-র এমন পরিকল্পনা রয়েছে যে, মাস খানেক সময় রাজ্যে ৫টি রথ ঘোরার পর হবে ব্রিগেড সমাবেশ। সেখানে মোদীর উপস্থিতি চান রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।
জানুয়ারির শেষ দু’দিনের বঙ্গসফর বাতিল হয়ে গিয়েছিল অমিতের। দিল্লিতে বিস্ফোরণ এবং তজ্জনিত পরিস্থিতিতে অমিত আসতে না পারায় ‘পরিবর্ত’ হিসাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে এনে ৩১ জানুয়ারি ডুমুরজলার যোগদান মেলা সম্ভব হলেও ঠাকুরনগরে তা করা যায়নি। নাগরিকত্ব প্রশ্নে কেন্দ্রের অবস্থান জানাতে আসার জন্য অমিতের সফরের দাবি তুলেছিলেন দলের সাংসদ তথা মতুয়াদের ভক্তিকেন্দ্র ঠাকুরবাড়ির সদস্য শান্তনু ঠাকুর। তাই ৩০ জানুয়ারি সকালে অমিত নিজেই ফোন করে জানান, খুব তাড়াতাড়িই ঠাকুরনগরে আসবেন। বুধবার শান্তনু আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘মতুয়া সমাজের মধ্যে আর কোনও দ্বিমত নেই। আমরা বলেছিলাম অমিত’জি আসবেন এবং আসছেন। উনি কথা রেখেছেন। এ বার নাগরিকত্ব দেওয়ার কথাও বিজেপি রাখবে। ৩০ জানুয়ারির সমাবেশের জন্য তৈরি মঞ্চ ভাঙা হয়নি। সেখানেই অল ইন্ডিয়া মতুয়া মঙসঙ্ঘের নামে সমাবেশ হবে।’’ শান্তনু আরও বলেন, ‘‘অমিত’জির সভায় ২ লক্ষের সমাবেশ হবে। রাজ্যের সমস্ত প্রান্ত থেকে মতুয়াদের প্রতিনিধিদের ডাকা হচ্ছে। কারণ, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী বলেন সেটা সকলের সরাসরি জানা দরকার।’’