অমিত মিত্র। ফাইল ছবি
মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় দিন গুনছেন আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য চার বিপ্লবী যুবক। তাঁদের মৃত্যুদণ্ড মকুব করতে ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় আর্চিবল্ড ওয়াভেলকে একের পর এক চিঠি লিখলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড মকুব হয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজের গোয়েন্দা শাখার ওই চার সদস্যের। তাঁদের মধ্যে এক জন হরিদাস মিত্র। আজ গান্ধীর জন্মজয়ন্তীতে সেই ঐতিহাসিক চিঠিগুলির প্রথমটি টুইটারে প্রকাশ করলেন তাঁরই পুত্র, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম উপদেষ্টা অমিত মিত্র। তাঁর দাবি, ‘‘এই চিঠিগুলি থেকে বোঝা যায় সুভাষচন্দ্র বসু ও গান্ধীর
মধ্যে কৌশল নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও ব্যক্তিগত স্তরে ঘনিষ্ঠতা ছিল।’’
টুইটারে অমিতের পোস্ট করা চিঠিটি গান্ধীর সঙ্গে ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের কথোপকথনের একটি সঙ্কলনের অঙ্গ। ১৯৪৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পুণের ‘নেচার কিওর ক্লিনিক’ থেকে ভাইসরয়কে ওই চিঠিটি লিখেছিলেন গান্ধী। তাতে তিনি লিখেছেন, ভাইসরয় লন্ডন থেকে ফেরার পরেই তাঁকে বিব্রত করার জন্য তিনি দুঃখিত। কিন্তু মানবিক উদ্দেশ্যে এই চিঠি লিখছেন তিনি।
এর পরেই গান্ধী জানিয়েছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রির অধিকারী ও সুভাষচন্দ্র বসুর আত্মীয়ার স্বামী হরিদাস মিত্রের মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু সেই আদেশের আইনি ভিত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। গান্ধীর বক্তব্য, ‘‘আমি আসামির কাকা এবং আইনজীবী কার্ডেন নোয়াডের পেশ করা দু’টি আবেদন খতিয়ে দেখেছি। জাপানের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে এ ক্ষেত্রে ক্ষমাভিক্ষার আবেদন মঞ্জুর করার যথেষ্ট কারণ আছে বলে আমি মনে করি। যদি এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় তবে তা হবে বড় মাপের রাজনৈতিক ভুল।’’
এর পরে গান্ধী জানিয়েছেন, লন্ডন থেকে ফিরে হরিদাস মিত্রের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখার আদেশ দিয়েছিলেন ভাইসরয়। তা জেনে তিনি খুশি হয়েছেন।
গান্ধীর কথায়, ‘‘এই মামলার প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন হরিদাস মিত্রের স্ত্রী। শরৎচন্দ্র বসুর বাড়িতে যে সব প্রার্থনা সভায় আমার অতিথি হিসেবে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল সেখানে উনি অনেক বার সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। শরৎচন্দ্র বসুকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশেও আমি খুশি।’’
গান্ধীর এই চিঠির জবাবে ভাইসরয়ের তরফে ই এম জেনকিন্স ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁকে একটি চিঠি লেখেন। তাতে জেনকিন্স জানান, ১৪ সেপ্টেম্বরের চিঠির জন্য গান্ধীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভাইসরয়। জেনকিন্স লেখেন, ‘‘হরিদাস মিত্রের বিষয়টি এখনও মহামান্য ভাইসরয়ের বিবেচনার জন্য পেশ করা হয়নি। এখনও সেটি বাংলার গভর্নরের বিবেচনাধীন। মহামান্য ভাইসরয়ের ধারণা, সম্ভবত কিছু দিনের মধ্যেই সেটি তাঁর বিবেচনার জন্য পেশ করা হবে।’’