—ফাইল চিত্র।
বারবার চোখ ঘষছিল বছর দশেকের আর্যভ বসু। কারণ জানতে চাওয়ায় সে জানায়, মনে হচ্ছে চোখে কিছু পড়ে রয়েছে। চোখ ধুয়েও সমাধান না-হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। তখনই জানা যায়, একটানা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকার জেরেই সমস্যা।
অনলাইনে স্কুলের ক্লাস, এমনকি গানের ক্লাসও করছে একটি বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়া আর্যভ। তাতেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। চক্ষু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আর্যভ একা নয়, চোখের নানা সমস্যা নিয়ে আসছে কচিকাঁচাদের অনেকেই। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, ল্যাপটপ বা মোবাইল ব্যবহারের সময় হঠাৎ করে বেশ খানিকটা বেড়ে যাওয়াই সমস্যার মূল কারণ। আপাতত অনলাইন ক্লাসের বিকল্প না-থাকায় চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকেরা। তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কয়েকটি সহজ নিয়ম মেনে চললেই অনেকাংশে ভাল থাকবে চোখ।
অনলাইনে ক্লাস করতে গিয়ে ছোটরা মূলত চোখ জ্বালা করা, জল পড়া, চোখে, মাথায় ও ভুরুর তলায় ব্যথা হওয়ার কথা বলছে বলে জানাচ্ছেন শিশু-চক্ষু চিকিৎসক ঈপ্সিতা বসু। এই সমস্যা ধোঁয়া-ধুলো থেকেও হয়, তবে এখন এর কারণ অতিরিক্ত ‘স্ক্রিনটাইম’। এমনটাই জানাচ্ছেন তিনি। মন দিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের পাতা পড়া স্বাভাবিকের থেকে বেশ খানিকটা কমে যায়। চোখের উপরিভাগ শুকিয়ে গিয়ে অস্বস্তি হতে থাকে। যাকে ‘ড্রাই আই সিনড্রোম’ বলা হয়।
অভিভাবকদের জন্য ওই চিকিৎসকের পরামর্শ, ক্লাসের সময়ে ঘনঘন চোখের পাতা ফেলাটা যে জরুরি, সে বিষয়ে সন্তানকে সচেতন করতে হবে। কিছু ক্ষণ অন্তর স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে দূরে তাকালে এবং শিক্ষক যখন শুধুই কথা বলছেন, তখন চোখ বন্ধ করে শুনলে বিশ্রাম পাবে চোখের পেশিগুলি। অস্বস্তি হলে চোখ পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিলে আরাম পাবে শিশুরা। এ ছাড়া, যতটা সম্ভব বড় স্ক্রিনের ব্যবহার করা ভাল। সেটির আলো ৫০-৭০ শতাংশে রাখলে এবং অক্ষরের আকার বড় করলে চাপ কমবে চোখের উপরে।
আরও পড়ুন: জুম-কে টক্কর দিতে এল জিয়োমিট, একেবারে বিনামূল্যের ভিডিয়ো কলিং অ্যাপ
আরও পড়ুন: খুন করে, দেহ নিয়ে দিনভর শহরের রাস্তায় ঘুরলেন ক্যাব চালক
বেশির ভাগ স্কুলেই দু’টি ক্লাসের মধ্যে ১০-২০ মিনিটের বিরতি থাকে। চক্ষু চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্তের পরামর্শ, বিরতিতে সম্পূর্ণ বিশ্রাম পাক চোখ। তখন বই-খাতার দিকেও না-দেখা ভাল। তিনি জানাচ্ছেন, বসার ভঙ্গিও গুরুত্বপূর্ণ। টেবিল-চেয়ারে বসতে পারলে সব চেয়ে ভাল। বসতে হবে সোজা হয়ে, ঘাড়-কোমর না বেঁকিয়ে। কম্পিউটার থাকবে ২২ ইঞ্চি দূরে। মোবাইলের ক্ষেত্রে দূরত্ব হবে ১৪ ইঞ্চি। মোবাইল হাতে নয়, রাখতে হবে সোজা করে। চোখের থেকে সামান্য নীচে, পিছনের দিকে অল্প হেলানো অবস্থায় থাকবে স্ক্রিন। সেটির পিছনে আলো যাতে না-থাকে, লক্ষ রাখতে হবে সে দিকে। আবার উল্টো দিক থেকে স্ক্রিনে আলো পড়লেও চোখে চাপ পড়ে। পাশের দেওয়ালে আলো থাকলে সেটাই ভাল। কারও চশমা থাকলে তা ব্যবহার বন্ধ করা চলবে না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অল্পবয়সিদের বিনোদনের জন্য স্ক্রিন-নির্ভরতা কমানোর কথা বলছেন ঈপ্সিতা বসু। দিনে স্ক্রিনটাইম বেঁধে দিতে হবে ঘণ্টা চারেকের মধ্যে। এ ছাড়াও, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার দু’-তিন ঘণ্টা আগেই বন্ধ করতে হবে ল্যাপটপ বা
মোবাইলের ব্যবহার। নইলে দেখা দিতে পারে ঘুমের সমস্যাও। বাচ্চাদের চোখে ক্রমাগত সমস্যা হলে চিকিৎসককে দেখাতে বলছেন তিনি। পাওয়ারের পাশাপাশি চোখের পেশির ভারসাম্য বজায় আছে কি না, সেই পরীক্ষাও প্রয়োজন বলে মত তাঁর। আবার জ্যোতির্ময় দত্ত বললেন, ‘‘বাচ্চারা বলতে পারে না, তাই তিন বছর বয়সের পরে বছরে এক বার চোখের চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার। তবে এ নিয়ে সচেতনতা অনেক বেড়েছে।’’
সাউথ পয়েন্ট স্কুলের তরফে কৃষ্ণ দামানি বললেন, ‘‘এখনও কোনও অভিভাবক কিছু বলেননি। তবে বাচ্চাদের চোখে সমস্যা হতেই পারে। এ নিয়ে ভাবার দরকার আছে।’’ হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্তের বক্তব্য, ‘‘টিভি দেখা বা অন্য কাজে মোবাইলের ব্যবহার কমিয়ে যাতে ক্লাসে সময় দেওয়া যায়, অভিভাবকদের সেই অনুরোধ করেছি।’’