Amherst Street Death Case

আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় মৃত্যু ‘অসুস্থতার কারণে’, পুলিশ সূত্রে দাবি, ময়নাতদন্তে মিলেছে ব্রেন টিউমার

পানের দোকানের মালিক অশোককে চুরি যাওয়া মোবাইল বেআইনি ভাবে কেনার অভিযোগে বুধবার তলব করা হয়েছিল আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায়। সেখানে তাঁকে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৩৮
Share:

—গ্রাফিক সনৎ সিংহ।

বুধবার মধ্য কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় ডেকে পাঠিয়ে অশোক সিংহ নামে এক যুবককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ তোলে তাঁর পরিবার। বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশ মর্গে ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকদের প্রাথমিক অনুমান, মৃত অশোক একাধিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, পানের দোকানের মালিক অশোকের ব্রেন টিউমার ছিল। তিনি ক্যানসার আক্রান্তও হয়ে থাকতে পারেন। তিনি এই সংক্রান্ত চিকিৎসার মধ্যে ছিলেন বলেও অনুমান করা হচ্ছে। শরীরের বাইরে কোনও চোট আঘাতের চিহ্ন নেই বলেও দাবি পুলিশ সূত্রে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা চললে ত্বক ও নখে যে ধরনের কালো ছোপ দেখা যায়, অশোকের ক্ষেত্রেও তা দেখা গিয়েছে। ব্রেন টিউমারটি সংরক্ষণ করা হয়েছে বলেও খবর। পাশাপাশি মৃতের চামড়াও সংরক্ষণ করে তা বায়োপসির জন্য পাঠানো হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। জানা গিয়েছে, মস্তিষ্কে এক ধরনের ফোলা বেলুনের মতো অংশ মিলেছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকেরা মৌখিক ভাবে এ-ও উল্লেখ করেছেন, এই ধরনের অসুখের ক্ষেত্রে হঠাৎ করেই মৃত্যু হয়। যা অশোকের ক্ষেত্রেও হয়েছে বলে তাঁদের ধারণা। সেই সঙ্গে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মৃতের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। তবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল।

Advertisement

ওই ঘটনার জেরে বুধবার সন্ধ্যায় জনবিক্ষোভে অবরুদ্ধ হয়ে যায় কলেজ স্ট্রিট। পরিবারের দাবি, চুরির মোবাইল কেনার অভিযোগে যুবককে ডেকে পাঠানো হয় থানায়। জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন মারধরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করে পরিবার। এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানান বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। একই সঙ্গে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ওসিকে অবিলম্বে অপসারণের দাবিও তোলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে মামলাও করেন কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল। হাই কোর্টে মূলত তিনটি আর্জি জানান সজল। এক, ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি করতে হবে। দুই, কমান্ড হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করতে হবে। তিন, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে জমা দিতে হবে। বৃহস্পতিবার সজলের আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল এই ঘটনায় জনস্বার্থ মামলা করতে চেয়ে উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আবেদনে বিরক্তি প্রকাশ করেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। বৃহস্পতিবার ওই আবেদনের শুনানিতে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কোনও ঘটনা ঘটলেই সেটাকে হাইজ্যাক করার চেষ্টা চলে।’’

সূত্রের খবর, পানের দোকানের মালিক অশোককে চুরি যাওয়া মোবাইল বেআইনি ভাবে কেনার অভিযোগে তলব করা হয়েছিল থানায়। সেখানে তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়, খুন তো দূরের কথা, ওই ব্যক্তিকে সামান্য মারধরও করা হয়নি। তিনি নিজেই থানায় অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরিয়ে আসে। মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মধ্য কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় করা একটি ফেসবুক লাইভের দৃশ্যে দেখা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির দেহ পড়ে রয়েছে থানার একটি ঘরের মেঝেতে । তাঁর দু’চোখ খোলা। দেহ নিথর। আত্মীয়স্বজনদের চিৎকার-চেঁচামেচির জবাবে কোনও কথা বলছেন না থানায় উপস্থিত কর্মীরা। পরে অবশ্য তাঁদের দেখা যায় কিছুটা সক্রিয় হয়ে ওই যুবকের দেহটিকে সেখান থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে। যদিও ওই ফেসবুক লাইভের সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।

বুধবার সন্ধ্যা ৫টা ৪৩ মিনিটে অশোক থানায় গিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৬টা ৫ মিনিটে তিনি একটি ফোন করেন। স্থানীয় বিজেপি নেতা মদনলাল গুপ্ত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ওই সময়ে তাঁকেই ফোন করেছিলেন অশোক। জানিয়েছিলেন, নামমাত্র দামে সম্প্রতি যে চোরাই ফোনটি কিনেছিলেন তিনি, সেই ফোন ফেরত দিয়ে দিতে বলছে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ মারধর করছে বলে মদনলালকে কিছু জানাননি অশোক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement