এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনী। —নিজস্ব চিত্র।
এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎকসাধীন ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কেবিনের সামনে বুধবার সন্ধ্যায় হঠাৎ তৎপরতা লক্ষ করা গিয়েছে। সেখানে চলে এসেছে জোকা ইএসআই হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী। ইডি আধিকারিকেরাও এসএসকেএম হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছেন। হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিভাগে রয়েছেন সুজয়। তার দরজার সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা দাঁড়িয়ে পড়েছেন। জল্পনা, বুধবারই ‘কাকু’কে নিয়ে যাওয়া হতে পারে ইএসআই হাসপাতালে। সেখানে তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করার কথা রয়েছে।
নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলায় ইডির দুই তদন্তকারী আধিকারিক মিথিলেশ মিশ্র এবং মুকেশ কুমারকে এসএসকেএমের হৃদ্রোগ বিভাগে ঢুকতে দেখা গিয়েছে।
নিয়োগ মামলার তদন্তের স্বার্থে ‘কাকু’র গলার স্বরের নমুনা পরীক্ষা করা জরুরি বলে জানিয়েছে ইডি। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত তা করে ওঠা যায়নি। নিয়োগ মামলায় গ্রেফতার হওয়া ‘কাকু’র শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাঁকে জেল থেকে এসএসকেএমে পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকদের দাবি, সুজয় শারীরিক ভাবে কণ্ঠস্বরের নমুনা দিতে প্রস্তুত নন।
বার বার এসএসকেএমে গিয়ে সুজয়ের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়ে আসেন ইডি আধিকারিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করে ‘কাকু’কে আটকে রেখেছেন। তাঁর গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এসএসকেএমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় ইএসআই হাসপাতালে ‘কাকু’কে নিয়ে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করানো হবে। তাঁর গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহ করা যাবে কি না, তা-ও জোকা ইএসআইয়ের মেডিক্যাল দল ঠিক করবে বলে জানিয়েছিল আদালত। এর পরেই এক দিন ইএসআইতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘কাকু’র কেবিনের সামনে পৌঁছে গিয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্স। কিন্তু সে দিনও তাঁকে হাসপাতাল থেকে বার করা যায়নি। এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, আগের দিন রাত থেকে সুজয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাঁকে রাখতে হয়েছে আইসিসিইউতে। সে দিন ছ’ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে ফিরে গিয়েছিল ইডি।
বুধবার প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাই কোর্টে। বিচারপতি অমৃতা সিংহ রুদ্ধদ্বার শুনানি করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কেবল মামলাকারীর আইনজীবী এবং আদালত থেকে যাঁদের হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল, তাঁরা। ইডির যুগ্ম ডিরেক্টর এবং ইএসআই হাসপাতালের মেডিক্যাল দলের প্রধানকে মঙ্গলবারই তলব করেছিল আদালত। তাঁরা সেই মতো বুধবার হাজিরা দেন।
প্রাথমিক মামলার যে রিপোর্ট ইডি আদালতে জমা দিয়েছে, সেখানে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস এবং তার সিইও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তি সংক্রান্ত রিপোর্টও ছিল। ওই সংস্থাতেই কাজ করতেন সুজয়। রুদ্ধদ্বার শুনানিতে সেই সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার বিচারপতি সিংহ জানিয়েছিলেন, কী ভাবে কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, তার পদ্ধতি জানাতে হবে মেডিক্যাল আধিকারিককে। রুদ্ধদ্বার শুনানিতে ইএসআইয়ের তরফে তা-ও জানানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার আবার সেই শুনানি হবে হাই কোর্টে।