Winter In Kolkata

গরম তাল কাটলেও উপচে পড়া ভিড় বড়দিনের আগে

শীতের এই সময়ে প্রতি শনি এবং রবিবারই ভিড় হয় চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ইকো পার্কের মতো শহরের দর্শনীয় স্থানগুলিতে। এ দিনও তার অন্যথা হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৫১
Share:

উপভোগ: তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ায় অনেকেই পরেননি শীতের পোশাক। তবে তার জন্য শীতকালীন ভিড় কম ছিল না আলিপুর চিড়িয়াখানায়। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

চিড়িয়াখানায় ঢোকার মুখে মায়ের সঙ্গে প্রবল তর্ক চলছে এক কিশোরের। কিছুতেই সে শীতের পোশাক গায়ে রাখবে না। পরিস্থিতির প্রমাণ দিতে রীতিমতো শার্ট তুলে মাকে সে বলছে, ‘‘পিঠে হাত দাও। ঘেমে গিয়েছি।’’ একই রকম ছবি জাদুঘরের গেটেও। সঙ্গীর সঙ্গে সেখানে বচসা শুরু হয়েছে এক মহিলার। প্রবল বিরক্ত মহিলা বলছেন, ‘‘সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার— এত কিছু টেনে নিয়ে এলে, কোনটা পরা যাচ্ছে? ব্যাগে ভরে ঘুরতে হচ্ছে। এখন এগুলো বইবে কে?’’

Advertisement

শনিবার কলকাতার পরিস্থিতি ছিল এমনই। শীতের এই সময়ে প্রতি শনি এবং রবিবারই ভিড় হয় চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ইকো পার্কের মতো শহরের দর্শনীয় স্থানগুলিতে। এ দিনও তার অন্যথা হয়নি। কাল, সোমবার বড়দিন। তাই চলতি মরসুমের অন্য যে কোনও শনিবারের চেয়ে ভিড় হয়েছে বেশি। কিন্তু শীতযাপনের এই উৎসাহে ধাক্কা দিয়েছে বাড়তে থাকা গরম। অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘শীত হঠাৎ গেল কোথায়? তবে কি ঘামতে ঘামতেই বড়দিন কাটবে?’’

আশঙ্কা বাড়িয়েছে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস। আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছিল, গত ২০ তারিখের পর থেকে যে ভাবে গরম বাড়তে শুরু করেছে, সেটা চলবে বড়দিনেও। বাস্তবে দেখা গিয়েছে, ২০ ডিসেম্বর, বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতি এবং শুক্রবার তা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ১৫.২ এবং ১৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের চেয়ে যা ২ ডিগ্রি বেশি।

Advertisement

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘বঙ্গোপসাগরে ঘনিয়ে ওঠা ঘূর্ণাবর্তের জন্য এই অবস্থা। বিশেষ করে দিনের বেলায় বেশ গরম লাগছে। খুব হেরফের না হলেও বড়দিনে এই রকমই গরম থাকতে পারে। অন্তত ২০ ডিসেম্বরের আগে যে শীতের আমেজ ছিল, সেটা থাকবে না।’’ মিলেনিয়াম পার্ক-ফেরত এক ব্যক্তির মন্তব্য, ‘‘শীতের গরম তো, তাই সহনীয়। এই ক’দিন ঘোরাফেরার আনন্দ থেকে দূরে থাকা যায় না।’’

এই আবহাওয়ার মধ্যে সব চেয়ে বেশি ভিড় চোখে পড়েছে চিড়িয়াখানা আর নিউ টাউনের ইকো পার্ক চত্বরে। একটি অন্যটিকে ভিড়ের নিরিখে টেক্কা দিয়েছে যেন। দু’জায়গার কর্তৃপক্ষেরই দাবি, প্রায় ৪০ হাজারের আশপাশে ভিড় হয়েছিল। আজ, রবিবার এবং কাল, বড়দিনে ভিড় ৯০ হাজারের
গণ্ডি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অনুমান। চিড়িয়াখানায় জ্যাকেট কোমরে বেঁধে ঘুরতে থাকা এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘গরমের সঙ্গেই মেঘলা গুমোট পরিবেশ হয়ে রয়েছে।
আগামী ক’দিন কেমন আবহাওয়া থাকে, তা ভেবে আজই পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি।’’ সেখানেই দুই তরুণীকে দেখা গেল, গোটা পরিবারের শীতের পোশাক ভর্তি একটি ব্যাগের দু’দিকের হাতল দু’জনে ধরে নিয়ে চলেছেন। বললেন, ‘‘ঠান্ডা থাকলে ভাল। এই রকম আবহাওয়া থাকলেও ভাল। সবেতেই আনন্দ করতে জানতে হয়।’’

জাদুঘরের সামনে আবার এক কলেজপড়ুয়া বললেন, ‘‘সকালের দিকে একটু গরম হচ্ছে। বিকেলেই তো আবার ঠান্ডা হাওয়া দিতে শুরু করছে।’’ প্রিন্সেপ ঘাটে ঘুরতে আসা চন্দননগরের এক শিক্ষকের বক্তব্য, ‘‘সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিন্তু এখনও স্বাভাবিকের চেয়ে কম। তাই দিনে গরম লাগলেও রাতে কম্বল ছাড়া যাচ্ছে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement