ডিজে-র সঙ্গে কান ফাটাচ্ছে তাসা পার্টিও

দুর্গাপুজোর পরে কালীপুজো ঘিরেও এখন একই রকম শব্দযন্ত্রণা চলছে বলে অভিযোগ উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন বড় রাস্তা সংলগ্ন বাসিন্দাদের।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৯ ০১:২৪
Share:

ফাইল চিত্র।

লোহার স্ট্যান্ডে এলইডি আলোয় মোড়া কালী প্রতিমা। কুমোরটুলি থেকে মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সামনে জনা কুড়ির ভিড় দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে নাচতে ব্যস্ত। ওই জনা কুড়ির জন্যই আনা হয়েছে দু’দল তাসা পার্টি! প্রতিটি দলে দামামার মতো বড় বাদ্যযন্ত্র বাজানোর লোক ছাড়াও রয়েছেন আরও পাঁচ জন করে। কোনও মতে মাথা গুনে নিয়ে শোভাবাজার মোড়ে অটোর অপেক্ষায় থাকা এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘২০ জন নাচবে বলে ১২ জন বাজাতে এসেছেন। পুলিশ শুধুই ডিজে খুঁজছে। তাসাই বা কম কী?’’

Advertisement

দুর্গাপুজোর পরে কালীপুজো ঘিরেও এখন একই রকম শব্দযন্ত্রণা চলছে বলে অভিযোগ উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন বড় রাস্তা সংলগ্ন বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, লাগাতার প্রচারের জেরে কেউ কেউ হয়তো এখন গাড়িতে বক্স লাগিয়ে বেরোচ্ছেন না। কিন্তু তাঁরাই সঙ্গে নিচ্ছেন প্রচুর সংখ্যক তাসাবাদক। তাঁদের বাজনার চোটে ঘুম উড়ছে যখন তখন। সঙ্গে থাকছে গাড়িতে মাইক লাগিয়ে গান বাজানোর ব্যবস্থা। অরবিন্দ সরণির এক আবাসনের বাসিন্দা স্নেহা ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘সন্ধ্যায় মেয়েকে পড়তে বসানো তো ছেড়েই দিলাম। বাড়িতে আমার বয়স্ক মা রয়েছেন। মাঝেমধ্যেই কেঁপে উঠছেন তিনি। বক্স না বাজুক, তাসার আওয়াজ যে কী, তা যাঁদের শুনতে হয় তাঁরাই বোঝেন।’’ প্রায় একই দাবি গ্রে স্ট্রিট, বিধান সরণি ও বিডন স্ট্রিটের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশের। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ এই সময়ে একেবারেই সক্রিয় থাকে না। বড় বক্স দেখলে তবু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা হয়। তাসায় পুরো ছাড়।

পরিবেশকর্মীদের বড় অংশই অবশ্য জানাচ্ছেন, বক্স বা ডিজে বলে কোনও ব্যাপার নেই। ‘অ্যাম্বিয়েন্ট নয়েজ়’ কোনও ভাবে বাড়লেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। তা যে কোনও ভাবে তৈরি শব্দ হতে পারে। এক পরিবেশকর্মী বললেন, ‘‘এমনিতে শব্দবাজির একটা সহনমাত্রা রয়েছে। এ রাজ্যের জন্য বাজির শব্দমাত্রা সর্বোচ্চ ৯০ ডেসিবেল। মাইক, লাউডস্পিকার বা অন্য কিছুর ক্ষেত্রে শব্দমাত্রা কত হবে, তা আলাদা করে বলা নেই। তবে আবাসিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পাঞ্চলের জন্য নির্ধারিত যে শব্দসীমা রয়েছে, তা কোনও ভাবেই অতিক্রম করা যাবে না। অর্থাৎ শিল্পাঞ্চল, বাণিজ্যিক বা আবাসিক এলাকায় দিনে যথাক্রমে ৭৫, ৬৫ ও ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৭০, ৫৫ ও ৪৫ ডেসিবেলের সীমা লঙ্ঘন করলেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’’ যদিও পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘বক্স বা মাইক আটকাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। তাসা নিয়ে হয়তো তারা ভাবছেই না। তাসা দলে শব্দের উৎস অনেক। এতগুলো উৎসকে কী ভাবে আটকানো হবে, তা নিয়ে হয়তো স্পষ্ট ধারণাই নেই।’’ কথা বলে দেখা গিয়েছে, তাসাদলের মালিক বা তাসাবাদক, কারওই এ ব্যাপারে কোনও সচেতনতা নেই।

Advertisement

যদিও গত বছরগুলির মতো চলতি দুর্গোৎসবেও পুলিশের হাতে নতুন করে শব্দ পরিমাপক যন্ত্র তুলে দিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পুলিশ সূত্রের খবর, রাজ্যের বিভিন্ন থানায় ৫৪০টি নতুন ওই যন্ত্র গিয়েছে। আরও ৮০০টি যন্ত্র আসার কথা। তাতে জিপিএসের পাশাপাশি ঘটনাস্থলেই ব্যবস্থা নিয়ে জরিমানা করার জন্য প্রিন্টারও লাগানো রয়েছে। তবে ব্যবস্থা থাকলেও তা ব্যবহারে পুলিশের গড়িমসি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে নানা মহলে। কলকাতা পুলিশের কমিশনার অনুজ শর্মা অবশ্য বারংবার বাহিনীকে এ নিয়ে সতর্ক করেছেন বলে খবর। অনুজ বলেছেন, ‘‘বক্স, মাইকের পাশাপাশি যে কোনও ধরনের শব্দ-তাণ্ডব রুখতে সব স্তরের পুলিশকর্মীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথা হলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

এর পরেও পরিস্থিতি বদলাবে কি? পুলিশের বড় পরীক্ষা আগামী সাত দিন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement