ফাইল ছবি
প্রথমে রাজ্য নির্বাচন কমিশন কোর্টে জানিয়েছিল, ২৫ শতাংশ স্পর্শকাতর বুথে সিসি ক্যামেরা থাকবে। কলকাতা হাই কোর্ট তাতে সন্তুষ্ট হয়নি। কলকাতা পুরসভার ভোট নিয়ে জোরদার আইনি লড়াইয়ের মধ্যে উচ্চ আদালত নির্দেশ দেয়, সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে মহানগরীর সব বুথেই।
কিন্তু যে-উদ্দেশ্যে সেই নির্দেশ, রবিবার, ভোটের দিন সেই সব ক্যামেরার ‘পজ়িশন’ বা অবস্থানই তাতে জল ঢেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। অভিযোগ, বেশির ভাগ সিসি ক্যামেরা ছিল গগনমুখী। ফলে বুথে কোনও গন্ডগোল হলেও তার ছবি আকাশের দিকে মুখ করা ক্যামেরায় ধরা পড়ার কথা নয়। সেই সঙ্গেই অভিযোগ, কোথাও কোথাও ক্যামেরা সরাসরি এমন ভাবে মাটির দিকে তাক করা ছিল যে, সেগুলিতেও বুথের ছবি ওঠার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ভোট শুরুর পরেই রবিবার সকালে রবীন্দ্র সরণির ওরিয়েন্টাল স্কুলে অভিযোগ ওঠে, সিসি ক্যামেরার মুখে কাগজ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ গিয়ে দেখে, ক্যামেরার মুখে শুধু কাগজ নয়, ওই ক্যামেরার সংযোগই খোলা! তার পরে কাগজ খুলে সেই ক্যামেরা চালু করা হলেও দেখা যায়, ওই স্কুলের গায়ে লাগানো অন্য বেশ কয়েকটি ক্যামেরা আকাশের দিকে ঘোরানো।
একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বেশ কয়েকটি স্কুলে। গিরিশ পার্ক এবং শ্যামপুকুর এলাকার কয়েকটি ভোটকেন্দ্রেও সিসি ক্যামেরার সংযোগ খোলা ছিল বলে অভিযোগ। এ দিন বড়তলা থানায় ধর্নায় বসা সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, উত্তর কলকাতার ওই অংশে, বিশেষত ১৭-১৮ নম্বর ওয়ার্ডে সিসি ক্যামেরায় সে-ভাবে ফুটেজই ওঠেনি। বরং যে-ক’টি ক্যামেরা কাজ করছিল, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিকল করে দেওয়া হয় সেগুলিকেও।
সিসি ক্যামেরার অভিমুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কসবা সংলগ্ন ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডেও। ওই ওয়ার্ডের কল্যাণ সঙ্ঘ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৪ এবং ৩৪এ বুথে সিসি ক্যামেরার মুখ অন্য দিকে ফেরানো ছিল বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বিজেপি প্রার্থী। দোলনা স্কুলে ৩২ নম্বর বুথেও একই ঘটনা নজরে পড়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির। তারা এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ জানিয়েছে। বন্দর এলাকায় অবশ্য কোনও বুথে সিসি ক্যামেরার অবস্থান বা তার মুখে কাগজ সেঁটে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেনি।
এ দিন সকালেই সোশ্যাল মিডিয়া মারফত বেশ কিছু ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দেখা গিয়েছে, ২৭, ২৯, ৩৫ সেকেন্ডের এই সব ফুটেজ সরাসরি সিসি ক্যামেরা থেকে নেওয়া। ক্যামেরায় বুথের ভিতরের ছবি। বুথের ভিতরে কয়েক জন কাজ করছেন। ছবি থেকে স্পষ্ট, দেওয়ালের উপরিভাগে বসানো ক্যামেরা। সেখানে দরজা দিয়ে দুই যুবক ঢুকলেন। এক জনের হাতে আঠা লাগানো সাদা কাগজ। সেটি নিয়ে অন্য যুবক কোনও বস্তুর উপরে উঠে ক্যামেরার মুখে সাঁটিয়ে দিচ্ছেন সেই আঠা লাগানো সাদা কাগজ।
ওই ফুটেজের ডান দিকের উপরের কোণে দিন ও সময় দেখাচ্ছে ১৮ ডিসেম্বর, শনিবার বিকেল পৌনে ৫টা। অর্থাৎ ভোটের দিন রবিবার সেই কাগজ সাঁটা হয়নি। বিরোধীদের প্রশ্ন, তবে কি পরিকল্পনা করে ভোটের আগের দিনেই বেশ কিছু বুথে গিয়ে কাগজ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে? যাতে ভোটের দিন অবাধ ছাপ্পা বা বুথ দখলের ছবি ক্যামেরায় ধরা না-পড়ে? যদিও কাগজ সাঁটানোর সেই ছবি, নজরদারিতে নিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, সব সিসি ক্যামেরাই চালু ছিল। কোনও অসুবিধা হয়নি। ক্যামেরায় কাগজ সেঁটে দেওয়ার অভিযোগের তদন্ত হয়েছে বলে দাবি কমিশনের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, স্কুলের সিসি ক্যামেরা আটকানো হয়ে থাকতে পারে। তবে কমিশনের বসানো সিসি ক্যামেরা আটকানো হয়নি।