ছবি: সংগৃহীত
বিদেশে বসে একের পর এক কলকাতাবাসীকে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ফাঁদে ফেলছে একদল প্রতারক। একই দিনে এক ব্যক্তির ক্রেডিট কার্ড নিঃশেষ করে অন্য জনের ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। দুবাইয়ে বসে কলকাতায় থাকা ব্যক্তির কার্ড দিয়ে কাটা হচ্ছে দেদার বিদেশি উড়ানের টিকিট।
সম্প্রতি কলেজ স্ট্রিটের বাসিন্দা শৈবাল মজুমদারের ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রথমে ২ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা দিয়ে উড়ানের টিকিট কাটা হয়। শৈবালের ফোন সেই সময়ে বন্ধ ছিল। এর পরে আরও ৯২,৯১৫ টাকা তোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর কার্ডের ক্রেডিট লিমিট শেষ হয়ে যাওয়ায় সেই টাকা তুলতে পারেনি প্রতারকেরা। ব্যাঙ্কই সেই লেনদেন আটকে দেয়।
বিধাননগর পুলিশের কাছে জমা পড়া অভিযোগে দেখা যাচ্ছে, একই দিনে বাগুইআটির বাসিন্দা শুভজিৎ কুণ্ডুর ক্রেডিট কার্ড থেকে ৯২,৯১৫ টাকাই তুলে নেওয়া হয়েছে। সেটাও তোলা হয়েছে উড়ানের টিকিট কাটার জন্য। তবে শৈবালের ক্ষেত্রে যেমন দুবাইয়ের মুদ্রা দিরহাম ব্যবহার করা হয়েছিল, শুভজিতের ক্ষেত্রে ভারতীয় মুদ্রা ব্যবহার করা হয়েছে।
শৈবাল ও শুভজিৎ দু’জনেরই দাবি, ক্রেডিট কার্ড থেকে বড় অঙ্কের লেনদেন হওয়ার আগে গ্রাহকের কাছে সতর্কবার্তা আসে। বিশেষত যদি বিদেশ থেকে সেই লেনদেন করার চেষ্টা হয়। কিন্তু তাঁরা কোনও বার্তা পাননি। শৈবাল নিশ্চিত, তাঁর ক্ষেত্রে লেনদেন বিদেশ থেকেই হয়েছিল। কিন্তু শুভজিতের ক্ষেত্রে ভারতীয় মুদ্রায় লেনদেন হওয়ায় বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাঁর সন্দেহ, শৈবালের ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একই অঙ্কের টাকা তাঁর কার্ড থেকে তুলে নেওয়া হয়।
লকডাউনের সময়ে শৈবাল নিয়মিত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিদ্যুৎ ও ফোনের বিল দিয়েছেন। শুভজিৎ অনলাইনে কেনাকাটার জন্য কার্ড ব্যবহার করেছেন। পুলিশের দাবি, সেখান থেকেই কার্ডের প্রতিলিপি তৈরি করে নিচ্ছে প্রতারকেরা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, বহু মানুষই তো কলকাতায় বসে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। তা হলে কি তাঁদেরও কার্ড থেকে টাকা খোয়া যেতে পারে?
লালবাজারের গোয়েন্দারা জানান, দু’ভাবে গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ডের তথ্য জেনে নেয় প্রতারকেরা। নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে কার্ডের তথ্য হাতিয়ে ঘরে বসেই যন্ত্র মারফত সেই তথ্য খালি ম্যাগনেটিক কার্ডে ভরে নেয়। ওই কার্ডটি হয়ে যায় আসল কার্ডের প্রতিলিপি। আবার, পিওএস মেশিনে কার্ড ঘষে (সোয়াইপ করে) জিনিসপত্র কেনা বা হোটেলের বিল মেটানোর সময়েও তথ্য হাতানোর চেষ্টা হয়। ‘ডুপ্লিকেট কার্ড রিডার’-এর মাধ্যমে পিন-সহ যাবতীয় তথ্য হাতানো হয়।
এক গোয়েন্দা জানান, কয়েক বছর আগে এ শহরের কিছু দোকানদারকে চক্রের সঙ্গে যুক্ত করে নাইজেরিয়ার প্রতারকেরা ওই কায়দায় জালিয়াতি করত। ভিন্ রাজ্য বা বিদেশে বসে ওই প্রতিলিপি করা কার্ড দিয়ে লেনদেন হত আসল গ্রাহককে অন্ধকারে রেখে। একটি চক্রের চাঁইকে গ্রেফতারের পরে জালিয়াতি অনেকটাই বন্ধ হয়।
গোয়েন্দাদের পরামর্শ, জালিয়াতির আশঙ্কা কমাতে ক্রেডিট কার্ডে বিল মেটানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। দোকান বা অনলাইন কেনাবেচার সাইট যেন পরিচিত হয়, তা দেখতে হবে। তাঁদের আরও পরামর্শ, অচেনা, ছোট দোকান বা সাইটে কার্ড ব্যবহার এড়িয়ে চলাই ভাল।