প্রতীকী ছবি।
কাউন্সিলর ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে কাটমানি এবং তোলাবাজি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে সারা রাজ্যের সঙ্গে কলকাতাতেও শাসক দলের কাউন্সিলরদের অস্বস্তি বাড়ছিল। যা আরও বেড়ে যায় উত্তর কলকাতার দুই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে এক প্রোমোটারের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ফেসবুক ও হোয়াট্সঅ্যাপে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায়। শনিবার ছিল পুরসভার মাসিক অধিবেশন। সেখানেও ভাইরাল হওয়া ওই অভিযোগ নিয়ে আলোচনার দাবি জানান বিরোধী বিজেপি ও বাম কাউন্সিলরেরা। অধিবেশনের শুরুতেই বিজেপি-র মীনাদেবী পুরোহিত চেঁচিয়ে বলতে থাকেন, ‘‘তৃণমূলের কাউন্সিলর ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কী হয়েছে, জানতে চাই।’’ চেয়ারপার্সন মালা রায় সতর্ক ভাবে তা এড়িয়ে গেলেও সারা দিন পুর ভবনে সেই চর্চাই চলে। শাসক দলের বেশ কয়েক জন কাউন্সিলরের ক্ষোভ, মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরে পাড়ায় পাড়ায় তাঁদের ‘ভূমিকা’ নিয়ে চর্চা চলছে এবং কাউন্সিলর মানেই কাটমানি ও ঘুষখোর অপবাদ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এতে তাঁদের সম্মান নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম অবশ্য এ দিনও বলেন, ‘‘এক-দুই শতাংশ জনপ্রতিনিধির কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সকলের চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।’’
দক্ষিণ কলকাতার একাধিক কাউন্সিলরের বক্তব্য, এলাকায় তাঁদের একটা সম্মান রয়েছে। দলের পক্ষ থেকে এমনটা বলা হলে লোকে তো তার সুযোগ নেবেই। এক মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘দু’জন কাউন্সিলরকে দিয়ে শুরু হয়েছে। এর পরে তো আরও বাড়বে। যে কাউন্সিলরের উপরে কোনও প্রোমোটার বা কারও রাগ থাকবে, তিনি তো কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে যা খুশি বলবেন।’’ এর একটা বিহিত না হলে দলে অসন্তোষ বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি। আগামী বছর কলকাতা পুরভোট। তার আগে এই ঘটনা কত দূর গড়ায়, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।
শাসক দলের একাধিক মহিলা কাউন্সিলরও এ দিন জানান, কাটমানি, তোলাবাজির অভিযোগ তাঁদেরও পিছু ছাড়ছে না। এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘দল তো জানে কলকাতার কাউন্সিলরেরা কত টাকা ভাতা পান। মাসে ৪৩৫০ টাকা। এর মধ্যে ৫০০ টাকা দলের তহবিলে দিতে হয়। কাউন্সিলরদের কী কী করতে হয় জানেন? সময়-অসময় নেই, হুটহাট বলে দেওয়া হয়, মিটিংয়ে এত লোক আনতে হবে। কখনও বলা হয়, ওয়ার্ডে দলের সমর্থনে মিটিং-মিছিল করতে হবে। মিছিলে লোক নিয়ে যাওয়ার গাড়ি ভাড়া করতে হয় কাউন্সিলরদের। টাকাও জোগাড় করতে হয় কাউন্সিলরদেরই। এর মানে দল ধরেই নিয়েছে, কাউন্সিলরদের টাকার অভাব নেই। কিন্তু কোথা থেকে আসবে সেই টাকা?
এ দিন অধিবেশন শেষে পুর ভবনের অলিন্দ থেকে কক্ষ, সর্বত্র একই আলোচনা। উত্তর কলকাতার যে দুই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে প্রোমোটারের অভিযোগ ভাইরাল হয়েছে, তাঁদের এক জন তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তনু সেন, যিনি আবার রাজ্যসভার সাংসদও। অন্য জন দু’নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পুষ্পালি সিংহ। শান্তনুবাবু এ দিন পুর অধিবেশনে হাজির ছিলেন না। সতীর্থ কাউন্সিলরদের কাছে পুষ্পালিদেবী বলেছেন, ‘‘আমি ওই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করাব।’’