প্রতীকী ছবি।
আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালতে বিচারক ও আইনজীবীদের দ্বন্দ্বে অচলাবস্থা চলছে প্রায় তিন মাস ধরে। সমস্যা মেটাতে অবশেষে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হল আলিপুর আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশন। বুধবার বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে হাইকোর্টের জ়োনাল বিচারপতির কাছে এই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে আদালত চালু করার আবেদন জানিয়ে সাত পাতার একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে অচলাবস্থা চলছে আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালতে। সমস্যার সমাধানসূত্র খুঁজতে পুজোর ছুটির আগে জেলা বিচারকের তরফে বিশেষ আদালতের বিচারক ও আইনজীবীদের নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করা হয়। সেই বৈঠকে মীমাংসাসূত্রও বেরোয়। কিন্তু আইনজীবীদের তরফে আদালত বয়কট চালু রাখা হয়। পরে জেলা বিচারকের নির্দেশে বয়কটকারী আইনজীবীদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা। কিন্তু আইনজীবীরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বার অ্যাসোসিয়েশন।
আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এজলাসে করোনা-বিধি ঠিক মতো মানা হচ্ছে না বলে কয়েক জন আইনজীবীকে ভর্ৎসনা করেছিলেন বিচারক। সেই ঘটনার পরেই আইনজীবীরা অভিযোগ তোলেন, বিচারক তাঁদের অপমান করেছেন। তাই ৫ সেপ্টেম্বর থেকে বিশেষ পকসো আদালত বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ওই আইনজীবীদের পাশে থেকে বার অ্যাসোসিয়েশন বিশেষ আদালত বয়কট করার সিদ্ধান্তে প্রথমে সম্মতি দেয়। তার পরেই আদালতে জমতে থাকে মামলার পাহাড়। লকডাউনে এমনিতেই প্রায় ছ’মাস ধরে আদালতে কাজকর্ম ঠিকমতো হয়নি। আইনজীবীদের আন্দোলনে পকসো আদালত পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায়। এই মুহূর্তে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মামলা জমে রয়েছে। দিনের পর দিন শুনানি না হওয়ায় হয়রান হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।
আলিপুর আদালতের আইনজীবীদের একটি বড় অংশের বক্তব্য, সামান্য একটি ঘটনাকে হাতিয়ার করে মাসের পর মাস আদালত অচল করে রেখেছেন এক শ্রেণির আইনজীবী। তাঁদের অভিযোগ, বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ায় ক্ষোভ থেকেই ওই আইনজীবীরা এমন আচরণ করছেন। তাঁদের বক্তব্য, অপমান আসলে অজুহাত মাত্র। আদালত অচল করে রাখাটাই আইনজীবীদের একাংশের আসল উদ্দেশ্য।
আলিপুরের এক বিশিষ্ট আইনজীবীর কথায়, ‘‘এশিয়ার বৃহত্তম নিম্ন আদালত আলিপুর। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ আদালতে আইনজীবীদের টালবাহানায় দীর্ঘ দিন ধরে অচলাবস্থা চলছে। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক পরিস্থিতি।’’
আলিপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সম্পাদক পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এক শ্রেণির আইনজীবীর সঙ্গে কয়েক জন সরকারি আইনজীবী মিলে এই অচলাবস্থা তৈরি করেছেন। একটি ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করে আদালত বন্ধ রাখা হয়েছে। হাইকোর্টের কাছে আমাদের আবেদন, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে আদালত চালু করার ব্যবস্থা করা হোক। দিনের পর দিন আইনজীবীদের একাংশের অন্যায় দাবির জেরে হয়রান হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। পাশাপাশি, আলিপুরের প্রত্যেক আইনজীবী এই বদনামের ভাগীদার হচ্ছেন। দ্রুত এই সমস্যা মেটানো প্রয়োজন।’’
আলিপুর আদালতের আইনজীবী তথা রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য ইন্দ্রনীল বসু বললেন, ‘‘হাইকোর্টের মধ্যস্থতায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদালত চালু করার আবেদন জানাচ্ছি। দীর্ঘ দিন ধরে এই অচলাবস্থার কারণে বিচারপ্রার্থীরা নাজেহাল হচ্ছেন, যা কোনও ভাবেই কাম্য নয়।’’