বিদায়: এই দু’টি জিরাফ পৌঁছেছে হায়দরাবাদে। নিজস্ব চিত্র
এমন পরিস্থিতিতে সম্ভবত সাম্প্রতিক অতীতে পড়েননি আলিপুর চিড়িয়াখানার কর্তারা!
এক দিকে পাঁচ খুদের জন্মের পরে খুশির হাওয়া পশুশালার পরিবারে। ঠিক তখনই দুই সদস্যকে চিরদিনের জন্য পাঠিয়ে দিতে হয়েছে প্রবাসে।
আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত জানান, হায়দরাবাদ থেকে ছ’টি মাউস ডিয়ার আনা হয়েছিল। তার একটি কিছু দিনের মধ্যেই মারা যায়। কিন্তু সম্প্রতি ফের পাঁচটি শাবক জন্মেছে ওই চতুষ্পদী পরিবারে। দিব্যি সুস্থও রয়েছে তারা। সব মিলিয়ে ১০ সদস্যের ‘মাউস ডিয়ার’ পরিবার খুশিতে ভরপুর।
সেই আনন্দের মধ্যেই আলিপুরকে বিদায় জানিয়েছে সানি ও বাবলি। ওরা আলিপুরে জন্মানো দু’টি জিরাফ। চিড়িয়াখানার খবর, পুরুষ সানির বয়স প্রায় সাড়ে তিন বছর এবং বাবলির আড়াই বছর। ওই দু’জন চলে যাওয়ায় এখন জিরাফ পরিবারে ন’জন সদস্য রয়ে গেল।
২০১৭ সালে হায়দরাবাদ নেহরু জুলজিক্যাল পার্ক থেকে এক সিংহ দম্পতি, এক জাগুয়ার দম্পতি এবং ৬টি মাউস ডিয়ার এসেছিল আলিপুরে। সেই লেনদেনের শর্ত মেনে জিরাফদের হায়দরাবাদের ওই চিড়িয়াখানায় পাঠানোর কথা জানিয়েছেন আশিসবাবু। তিনি এ-ও জানান, শিবরাত্রির দিন দু’টি আলাদা খাঁচায় চেপে ওই দু’জন রওনা দিয়েছিল। প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার উজিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে হায়দরাবাদে পৌঁছেছে তারা। সেখানে সুস্থই রয়েছে। চিড়িয়াখানার খবর, এর আগে এক বার জিরাফ পাঠানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সে বার জিরাফটি খাঁচার ভিতরে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মারা যায়। এ বার তাই গোড়া থেকেই বিশেষ সতর্ক ছিলেন চিড়িয়াখানার কর্তারা।
চিড়িয়াখানার খবর, এ বার দুই সদস্যকে পাঠানোর জন্য দু’টি বিশেষ ভাবে খাঁচা তৈরি করা হয়েছিল। গাড়ির দুলুনিতে খাঁচার গায়ে ধাক্কার চোটে যাতে আঘাত না লাগে, তার জন্য তিন ধারে খড় ও চট দিয়ে বিশেষ গদি তৈরি করা হয়েছিল। এক বারে জোর করে দু’জনকে খাঁচায় তোলা হয়নি। ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খাঁচা বসিয়ে রাখা হয়েছিল। ক’দিন ধরে ধাপে ধাপে খাঁচাবন্দি হওয়ার অভ্যাসও করানো হয়েছে সানি ও বাবলিকে। যাত্রাপথে আলিপুরের দুই কিপার, এক কর্মী এবং এক পশুচিকিৎসক ছিলেন। গোটা যাত্রাপথে মাঝেমধ্যেই কর্মীদের ‘ভিডিয়ো কল’ করে জিরাফদের হাল-হকিকতের খবর নিয়েছেন অধিকর্তা। দু’জন নিরাপদে পৌঁছনোর পরেই হাঁফ ছেড়েছেন তিনি।
কেন?
আশিসবাবু বলছেন, ‘‘এত দূরে পাঠাতে হচ্ছে। যদি মাঝপথে কোনও বিপদ হয়। ওরা কি আমাদের সন্তানের চেয়ে কম নাকি!’’