Pollution

বর্জ্যের আগুন থেকে বাতাসে ছড়াচ্ছে বিষ

স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, কে বা কারা জঞ্জালের স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেন, তা জানে না তারা! অথচ প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনের পর দিন ধরে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে জমছে জঞ্জাল।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:১৭
Share:

বিষ: কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারের আবর্জনা থেকে বেরোনো ধোঁয়ায় ঢাকছে এলাকা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

বড় গাড়ি বিশেষ চলে না। তবে ছোট, মাঝারি এবং লরির বিরাম নেই সেই রাস্তায়। মসৃণ সড়কে অবিরাম ছুটছে গাড়ি। রাস্তার ধারে ধাবা, আর খানকয়েক চায়ের দোকান। সে সবের মাঝেই সারি সারি জঞ্জালের জ্বলন্ত স্তূপ। সোদপুর ঘোলার মুড়াগাছা মোড় থেকে কিছুটা এগোলেই প্রতি বিকেলে এই দৃশ্য নজরে পড়বে।

Advertisement

স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, কে বা কারা জঞ্জালের স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেন, তা জানে না তারা! অথচ প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনের পর দিন ধরে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে জমছে জঞ্জাল। আর তার আগুনে দূষিত হচ্ছে এলাকার বাতাস। গত কয়েক বছর ধরে ঘটছে এমনই। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে বিরাটি থেকে শুরু করে সোদপুর, ব্যারাকপুর, কাঁচরাপাড়া হয়ে কল্যাণী পর্যন্ত বিস্তৃত। আর দূষণের এই ছবি চোখে পড়বে সেই বিস্তীর্ণ এলাকার সর্বত্র। কল্যাণীর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিরাটির বাসিন্দা রবি চক্রবর্তী ওই রাস্তা দিয়ে রোজ যাতায়াত করেন। তাঁর দাবি, ‘‘আট বছর ধরে এক ছবি দেখছি। দিনে-দুপুরে জঞ্জালের স্তূপ দাউদাউ করে জ্বলে। ফেরার সময়েও একই দৃশ্য, শুধু স্থান বদলে যায়। ওই ধোঁয়ার আশপাশে কিছু ক্ষণ থাকলেই শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। চারদিকে জনবসতি রয়েছে। ওই বিষবায়ু তো সেখানে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে।”

কিন্তু এই সমস্যার কারণে এলাকা ছেড়ে অনেক বাসিন্দাই চলে গিয়েছেন। সেই সংখ্যাটা ক্রমেই বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন জমি-বাড়ির দালালেরা। রোজ বাড়ির ঠিক সামনের জঞ্জাল স্তূপে আগুন জ্বলতে দেখতেন পায়েল চক্রবর্তী। আগে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে পানিহাটিতে থাকতেন। সম্প্রতি বাড়ি বিক্রি করে খড়দহে গঙ্গার ধারে ফ্ল্যাট কিনেছেন। পায়েল বলেন, ‘‘আমার শ্বাসকষ্ট ছিলই। গত পাঁচ বছরে তা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেছে। শেষ পর্যন্ত বাড়ি বদলের সিদ্ধান্ত নিই। এখন আগের তুলনায় ভাল আছি।’’ সল্টলেকে কর্মরত মুড়াগাছার শম্ভু সরকার বলেন, ‘‘যাতায়াতের পথে এই দৃশ্য রোজ দেখি। আমার বাড়ি কাছেই। বুঝতে পারি শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। নিজের বাড়ি, এ জন্যে বিক্রি করে দেব! দূষণ নিয়ে চারদিকে এত সচেতনতার প্রচার হয়, তবু কেন হুঁশ ফেরে না?’’

Advertisement

সোদপুরের এক শিশুরোগ চিকিৎসকও বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে আসা শিশুর সংখ্যা বাড়ছে‌। খেয়াল করে দেখেছি, তাদের বেশির ভাগই কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা।’’

কী বলছে প্রশাসন? পানিহাটি পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়েছে এক বছর আগে। বর্তমানে ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক আবুল কালাম আজাদ ইসলাম এই পুরসভার প্রশাসক। তিনি বলেন, “সমস্যা নিয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরও চিন্তিত।

সম্প্রতি নগরোন্নয়ন দফতর, কেএমডিএ সব পুরসভাগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছে। জঞ্জাল অপসারণ নিয়ে আলোচনাও চলছে। সময় লাগবে একটু, কিন্তু একটা সমাধান সূত্র নিশ্চয়ই বেরোবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement