তৃণমূল নেতার ছেলের বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মৃত বায়ুসেনা অফিসার

প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, গাড়ির চালক তৃণমূল নেতা মহম্মদ সোহারাবের ছেলে আম্বিয়া। পুলিশ তাঁকে খুঁজছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:২১
Share:

এই সেই গাড়ি। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

রাস্তা বন্ধ করে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়া চলছিল রেড রোডে। তার মধ্যেই কলকাতা পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ঢুকে পড়ে বেপরোয়া একটি গাড়ি। আর সেই গাড়ির ধাক্কাতেই মারা গেলেন বায়ুসেনার এক আধিকারিক অভিমন্যু গৌড় (৩০)। তাঁর বাড়ি গুজরাতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুণ্ডায় বায়ুসেনা ঘাঁটিতে তিনি কর্মরত ছিলেন।

Advertisement

প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, গাড়ির চালাচ্ছিলেন তৃণমূল নেতা মহম্মদ সোহারাবের ছেলে আম্বিয়া সোহরাব। পুলিশ তাঁকে খুঁজছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার সকাল ছ’টা নাগাদ প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়া শুরু হয়। খিদিরপুরের দিক থেকে ওই মহড়া রেড রোড ধরে ধর্মতলার দিকে যাচ্ছিল। সামনের সারিতে সেনার তিন বাহিনী এবং তার পরে কলকাতা পুলিশের সদস্যেরা ছিলেন। ঘটনাস্থলে থাকা কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, তখন সবে মহড়া শুরু হয়েছে। সেই সময় বায়ুসেনার ওই প্রশিক্ষক আধিকারিকের ট্রুপের মহড়া শুরু হয়েছে। নিজের টিমের সদস্যদের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই আধিকারিক। সওয়া ছ’টা নাগাদ আচমকাই খিদিরপুর রোড ধরে একটি গাড়ি ধর্মতলার দিকে বেপরোয়া ভাবে চলে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই গাড়িটি রেড রোডে ঢোকার আগে কলকাতা পুলিশের দু’টি গার্ড রেল ভাঙে। একটি খিদিরপুর রোডে এবং অন্যটি রেড রোডে ঢোকার আগেই। এর পর রেড রোডে ওঠার ঠিক আগেই জে কে আইল্যান্ডের কাছে তৃতীয় গার্ড রেল ভেঙে দ্রুত গতিতে ‘ইউ টার্ন’ নেয় গাড়িটি। সেই সময়েই অভিমন্যুকে ধাক্কা মারে। বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে পড়েন ওই আধিকারিক। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে কম্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

Advertisement

বায়ুসেনার আধিকারিক মৃত অভিমন্যু গৌড়

ধাক্কা মারার পরেই ‘ইউ টার্ন’ নিয়ে গাড়িটি ফের খিদিরপুর রোডের দিকে বেশ কিছুটা এগিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। অত্যাধুনিক গাড়ি, তাই ধাক্কা লাগলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে সামনের আসনের বেলুন খুলে গিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। তার পরেই গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায় চালক। তবে, পালানোর আগে গাড়ির সামনে এবং পিছনে লাগানো কাগজে ছাপা অস্থায়ী নম্বর ছিঁড়ে দিয়ে যায়। ফলে প্রাথমিক ভাবে ধন্দে পড়ে যায় পুলিশ। তবে এমন জায়গায় গিয়ে চালক গাড়ি থামায়, যা সিসিটিভি-র আওতার কিছুটা বাইরে। ঘটনার পর পরই সেখানে পৌঁছন কলকাতা পুলিশের কমিশনার সুরজিত্ কর পুরকায়স্থ। তিনি বলেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গার্ড রেল ভেঙে কী ভাবে গাড়িটি ঢুকে পড়ল, তাও আমরা দেখছি।’’

প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই গাড়িটি গত ৪ জানুয়ারি এজিসি বসু রোডের একটি শোরুম থেকে কেনা হয়েছিল। গাড়ির কাগজপত্রে আম্বিয়ার মোবাইল নম্বর এবং ই-মেল ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। এর পরেই আম্বিয়ার সন্ধানে তল্লাশি শুরু হয়। ২০০৬-এ বড়বাজার বিধানসভা কেন্দ্র থেকে আরজেডির হয়ে বিধায়ক হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন মহম্মদ সোহারাব। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে এ দিন সকালে সোহারাবের ছেলে আম্বিয়া-ই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। সূত্রের খবর, তাঁর নিত্যনতুন গাড়ির শখ রয়েছে। এমনকী, তাঁর সংগ্রহে বেশ কয়েকটি দামি এবং নামী গাড়ি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ তাঁর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। তৃণমূল নেতার জোড়াসাঁকোর বাড়িতে গিয়েও তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ সূত্রে খবর।


আম্বিয়া সোহরাব।—ফাইল চিত্র।

তিন তিনটে ব্যারিকেড ভেঙে কুচকাওয়াজের মহড়ার কাছাকাছি কী ভাবে ঢুকে পড়ল গাড়িটি? এ দিনের ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের তরফে যদিও দাবি করা হয়েছে, ওই সেনা আধিকারিককে ধাক্কা মারার পর দু’বার গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, প্রায় ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে চালানো গাড়ির চালক কোনও কিছুরই তোয়াক্কা করেনি। বায়ুসেনার তরফে ময়দান থানায় একটি খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement