উপায়: স্বস্তি দিতে টার্মিনালে পাখার ব্যবস্থা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
কিছু দিন ধরেই চলছে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। যার জেরে বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের বাতানুকূল যন্ত্রগুলি আপাতত বন্ধ। সে কারণেই টার্মিনালের কোনও কোনও অংশে কিছুটা সময় কাটালে দম বন্ধ হয়ে আসছে বলে জানাচ্ছেন অনেক যাত্রী। বিশেষত সকালের দিকে টার্মিনালের একতলায়, বাস গেটের সামনে এমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে অনেকের। বিমানবন্দরের কর্মী-অফিসারদের একাংশও এমন শ্বাসকষ্টের অভিযোগ জানিয়েছেন। ফলে টার্মিনালে পাখার সামনেই ভিড় জমাচ্ছেন যাত্রীরা।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ১২ ডিসেম্বর থেকে রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য নতুন টার্মিনালের বাতানুকূল ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় পাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে সমস্যা মিটছে না। উল্টে টার্মিনালের কোনও জায়গায় বহু যাত্রী জড়ো হলে সেখানে দম বন্ধ করা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। বেসমেন্টে যেখানে উড়ান সংস্থাগুলির দফতর রয়েছে, সেখানেও পাখা লাগিয়ে সুরাহা হচ্ছে না।
কেন এই পরিস্থিতি? বিমানবন্দর সূত্রের খবর, প্রতি বছর ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ বিমানবন্দরের টার্মিনালে বাতানুকূল যন্ত্র বন্ধ রেখে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়। ২০১৩ সালে নতুন টার্মিনাল চালু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতি বছরই এই কাজ হয়। কিন্তু আগে এমন সমস্যা দেখা দেয়নি। বুধবার কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্টের অভিযোগের কথা আমার কানে এসেছে। আমি টার্মিনালে কিছুক্ষণ কাটিয়ে অবশ্য কিছু বুঝতে পারিনি। কিন্তু অনেকে যখন অভিযোগ করছেন, তখন সমস্যা নিশ্চয়ই একটা হচ্ছে। ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলার কথা। সেই কাজ আরও আগে শেষ করা যায় কি না, সে বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং দলকে অনুরোধ করেছি।’’
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, করোনা আবহের পূর্বে মোট যত উড়ান চলাচল করত, এখন চলছে তার মাত্র ৬০ শতাংশ। দেশের ছ’টি শহর থেকে সপ্তাহে চার দিন কলকাতার সরাসরি উড়ানও বন্ধ রেখেছে রাজ্য সরকার। ফলে চলতি বছরে এই সময়ে যাত্রী সংখ্যা অনেকটাই কম। অফিসারদের একাংশ জানাচ্ছেন, অন্যান্য বছরের মতো এখনও ততটা ঠান্ডা পড়েনি, ফলে সহজেই দম বন্ধের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এক অফিসারের কথায়, ‘‘আগে টার্মিনালের ভিতরে যে তাপমাত্রা থাকত, তাতে সোয়েটার খুলতে হত না। বাতানুকূল যন্ত্র বন্ধ থাকার পর থেকে সোয়েটার খুলতে হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও সমস্যা হচ্ছে।’’
দম বন্ধ করা এই পরিস্থিতির জন্যই টার্মিনালে এবং নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরে বোর্ডিং গেটের সামনে রাখা বড় বড় পাখার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে যাত্রীদের। এমনকি, দিন কয়েক আগে কলকাতা থেকে ফেরার পথে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা ভিআইপি লাউঞ্জে বসেও এই অস্বস্তির কথা জানিয়েছিলেন। সে সময়ে ভিআইপি রুমে নড্ডার জন্য অতিরিক্ত পাখার ব্যবস্থা করতে হয়। তবে দিন দুই আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাগডোগরা যাওয়ার সময়ে অস্বস্তির কথা জানাননি। এক অফিসারের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী টার্মিনালের ভিতরে শাল জড়িয়ে হেঁটে বেড়িয়েছেন।’’
কলকাতা থেকে বিমান ধরতে অনেক যাত্রী টার্মিনালের একতলা থেকে বাসে করে বিমানের সামনে পৌঁছন। গেটের সামনের জায়গার পরিসর অল্প। ফলে সকালের দিকে কখনও কখনও একসঙ্গে আটটি উড়ানের প্রায় হাজারখানেক যাত্রী ওইটুকু জায়গায় জড়ো হচ্ছেন। আর তখনই শ্বাসকষ্টের অভিযোগ উঠছে। তবে সে সময়ে গেট খুলে, পাখা চালিয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং উড়ান সংস্থার কর্মী-অফিসারেরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন।