হয়রানি: পর পর বাতিল হয়েছে ট্রেন। সেই খবর জানতে ডিসপ্লে বোর্ডের সামনে ভিড় উদ্বিগ্ন যাত্রীদের। শনিবার, হাওড়া স্টেশনে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
জীবনে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন কখনও হইনি। এখন পরিবারের সকলের সঙ্গে বিহারের দারভাঙায় ভাইপোর বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দ করার কথা ছিল। কিন্তু সেই বিয়েবাড়িতে আদৌ পৌঁছতে পারব কি না, সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। এক বার শিয়ালদহ স্টেশন, এক বার কলকাতা স্টেশন করছি। এমন ভোগান্তির মধ্যে আগে কোনও দিন পড়িনি।
থাকি ব্যারাকপুরে। তবে আমাদের আদি বাড়ি দারভাঙায়। সেখানে ২০ জুন ভাইপো ইমরানের বিয়ে। দারভাঙায় যাব বলে শুক্রবার সন্ধ্যায় শিয়ালদহ থেকে গঙ্গাসাগর এক্সপ্রেসে চড়ে জসিডি পর্যন্ত পৌঁছেও গিয়েছিলাম। কিন্তু ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প ঘিরে গোলমালের জেরে ট্রেনটি সেখান থেকে শিয়ালদহে ফিরে আসে। তার পরে চলে যাই কলকাতা স্টেশনে। কিন্তু শেষমেশ সেখান থেকেও সুবিধা হয়নি।
ভাইপোর বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার বিকেলে আমরা পরিবারের অনেকে মিলে ব্যারাকপুরের বাড়ি থেকে বেরোই। সঙ্গে চারটি বাচ্চা। প্রচুর জিনিসপত্র। সন্ধ্যায় শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছে গঙ্গাসাগর এক্সপ্রেসে উঠি। পৌনে ৬টা নাগাদ ট্রেন ছাড়ে। এত জন মিলে বাড়ির ছেলের বিয়েতে যাচ্ছি, তাই সকলেরই মেজাজ ছিল বেশ ফুরফুরে। খোশমেজাজে গল্প করতে করতে যাচ্ছিলাম। সব চেয়ে বেশি আনন্দে ছিল বাচ্চারা। ওরা ট্রেনের মধ্যে হুটোপাটি করছিল। তখনও ভাবতে পারিনি, কী ভোগান্তি অপেক্ষা করে রয়েছে আমাদের জন্য।
জসিডি পর্যন্ত যেতে কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু তার পরে ট্রেন আর নড়ে না। যা শুনলাম, তাতে আমাদের সকলের মাথায় বাজ পড়ল। জানা গেল, ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের বিরোধিতার জেরে ছড়িয়ে পড়া গোলমালের কারণে ট্রেন আর এগোবে না। ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে শিয়ালদহে। মুহূর্তে আমাদের সমস্ত আনন্দ বদলে গেল বিষাদে। যা পরিণত হল দুশ্চিন্তায়। রাতের মধ্যেই ট্রেন ফিরে আসে শিয়ালদহে।
আমরা তখন ভাবছি, এ বার তা হলে ভাইপোর বিয়েতে পৌঁছব কী করে? সকলে মিলে আলোচনা করে ঠিক করলাম, কলকাতা স্টেশন থেকে চেষ্টা করে দেখা হোক। এর পরে সকলে মিলে সব জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাই কলকাতা স্টেশনে। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, শনিবার রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে কলকাতা স্টেশন থেকে জয়নগর এক্সপ্রেস ছাড়বে। ঠিক হয়, সেই ট্রেনেই দারভাঙা যাওয়া হবে। তখনও কি জানতাম, শনিবার বেলা গড়াতে বাতিল হয়ে যাবে জয়নগর এক্সপ্রেসও!
বিশাল লটবহর নিয়ে কলকাতা স্টেশনে চাদর পেতে বসে রইলাম। আমাদের সকলেরই তখন মন খুব খারাপ। বাচ্চাগুলোও হতাশ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তখনও আমাদের সকলের কাছে একচিলতে আশার আলো হয়ে ছিল ওই জয়নগর এক্সপ্রেস।
কিন্তু শনিবার বিকেলের দিকে মিলিয়ে গেল সেই আশার আলোটাও। যখন জানতে পারলাম, গন্ডগোলের জেরে বাতিল হয়ে গিয়েছে জয়নগর এক্সপ্রেসও। ভাইপোর বিয়েটা কি দেখা হবে, জানি না।
- আটকে পড়া ট্রেনযাত্রী
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।