ঝামেলা: ভাঙচুরের পরে পুলিশের গাড়ি। পিছনে সেই ধর্মীয় স্থান। রবিবার, চক্রবেড়িয়ায়। নিজস্ব চিত্র
বাড়ির পাশে একটি জায়গায় রাতে চলছিল পার্টি। গভীর রাতেও সেখান থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি শোনা যাওয়ায় প্রতিবাদ করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি। অভিযোগ, এর জন্য তাঁকে ও তাঁর দাদাকে মারধর করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাতে, বালিগঞ্জ থানার চক্রবেড়িয়া লেন এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই রাতে ব্লক সভাপতি দিলীপ বসুর বাড়ির পাশে একটি ধর্মীয় স্থানের একতলার ঘরে গভীর রাত পর্যন্ত পার্টি চলছিল। দিলীপবাবুর অভিযোগ, “রাত সাড়ে ১১টার পরেও মত্ত অবস্থায় হুল্লোড় শোনা যাচ্ছিল। বাধ্য হয়ে আমি ও আমার দাদা সুকুমার বসু ওঁদের চিৎকার করতে নিষেধ করি। আমরা দু’জনেই হৃদ্রোগী। দাদার সম্প্রতি বাইপাস অস্ত্রোপচার হয়েছে। কথা শোনা তো দূর, বরং আমাদের হুমকি দেওয়া হয়।’’ চিৎকার বন্ধ না হওয়ায় দিলীপবাবু ও সুকুমারবাবু বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতেই কয়েক জন মহিলা ও পুরুষ তাঁদের উপরে চড়াও হন।
দিলীপবাবুকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়। সুকুমারবাবুর নাকে-মুখে ঘুষি মারা হয় বলে অভিযোগ। এর পরে দিলীপবাবু বালিগঞ্জ থানায় ফোন করলে পুলিশ আসে। তত ক্ষণে দিলীপবাবুর বাড়ির সামনে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা ভিড় জমিয়েছেন। কয়েক জন কর্মী ওই মত্ত পুরুষ ও মহিলাদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন।
ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে দু’পক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে এলাকায় আসেন লালবাজারের কর্তারা। ডিসি (ইএসডি) সুদীপ সরকারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী এলাকা ঘিরে ফেলে। রাত ১টা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে দাবি পুলিশের।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওই ধর্মীয় স্থান ভাড়া দেওয়া হয়। অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দা এক পুলিশকর্মীর মদতে সেখানে শনিবার রাতে পার্টির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
রাতে ওই পুলিশকর্মীর গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ। তবে আগেও বেশ কয়েক বার এমন হুল্লোড় হয়েছিল বলে দাবি বাসিন্দাদের। ওই রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বালিগঞ্জ থানার ওসি লক্ষ্মীনারায়ণ পান। পরে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তাঁর হৃদ্যন্ত্রে সমস্যা ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। মাস কয়েক আগে লক্ষ্মীবাবু করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই রাতেই তাঁর হৃৎপিণ্ডে স্টেন্ট বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল। ঘটনায় পরে দু’পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।
রবিবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, শনিবার রাতের ঘটনাস্থলের সামনে ঝুলছে ‘ক্লোজ্ড’ লেখা সাইনবোর্ড। বসেছে পুলিশ পিকেট। একাধিক
বার বেল বাজালেও লোহার গেটের অন্য প্রান্তে কাউকে দেখা যায়নি।
এ দিকে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন মহিলা এবং শিশুরা। যদিও পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পুলিশকর্তাদের দাবি, ভিড় হটাতে লাঠি উঁচিয়ে শুধু তেড়ে যাওয়া হয়েছিল।