—প্রতীকী ছবি
জিভে ক্যানসার ধরা পড়েছিল ৮১ বছরের বৃদ্ধার। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, অস্ত্রোপচার জরুরি। কিন্তু করোনার আতঙ্কে দোলাচলে থেকেও শান্তি রক্ষিতের পরিজনেরা অবশেষে অস্ত্রোপচার করাতে রাজি হন। বৃদ্ধার ছেলের কথায়, ‘‘চিকিৎসা করলে এখন করোনা রোগী সুস্থ হচ্ছেন। কিন্তু ক্যানসারের অস্ত্রোপচার না করে ফেলে রাখার অর্থ, তা আরও ছড়িয়ে যাওয়া।’’
একটা সময়ে অতিমারির আতঙ্কে অনেকেই অন্য রোগের চিকিৎসায় হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। অস্ত্রোপচার তো দূর অস্ত্। সেখানে শান্তিদেবীর মতোই ক্যানসার আক্রান্ত প্রবীণদের একটি অংশ চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো অস্ত্রোপচার করিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন, জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বয়স, ক্যানসার ও কোভিড— এই তিনটি বিষয়কে অতিক্রম করেই এগিয়ে আসছেন প্রবীণেরা। করোনা ভীতিকে দূরে ঠেলে প্রবীণ রোগীদের অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত অন্যদের সাহস জোগাবে।’’
কারণ, কোভিড ১৯-এর ভয়ে যাঁরা কিছু সময়ের জন্য চিকিৎসা না করিয়ে থাকছিলেন, এখন দেখা যাচ্ছে তাঁদের অনেকেই ‘অ্যাডভান্স স্টেজ’-এ পৌঁছে গিয়েছেন। সেই তালিকায় কমবয়সিরাও রয়েছেন। গৌতমবাবু বলছেন, ‘‘অনেকেই ভাবছিলেন, আগে করোনা থেকে বাঁচি, তার পরে ক্যানসারের চিকিৎসা করাব।
আরও খবর: সোমবার বোলপুরে মুখ্যমন্ত্রী, রোড শো মঙ্গলবার, থিমে রবীন্দ্রভাবনা
আরও খবর: রাজ্যে দৈনিক মৃত্যু ও সংক্রমণের হার কমল, কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যায় ফের উদ্বেগ
কিন্তু ক্যানসারকে অস্বীকার করাই মারাত্মক ভুল।’’
তবে রোগীর পরিজনেদের রাজি করানোর বিষয়ে চিকিৎসদের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, মানছেন ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘বিনা চিকিৎসায় ক্যানসার রোগীর কী অবস্থা হতে পারে, তাঁর পরিজনকে সেটা ঠিক মতো ব্যাখ্যা করা অত্যন্ত জরুরি। সেটা করা হলে দেখা যাচ্ছে, ৮০ শতাংশ লোকই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে অস্ত্রোপচারে রাজি হচ্ছেন।’’ যদিও করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে ক্যানসার রোগীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছিল। কেউ সংক্রমণের ভয়ে হাসপাতালে আসেননি, কেউ আবার লকডাউনের জন্য তখন চিকিৎসকের কাছে পৌঁছতে পারেননি।
চিকিৎসকদের মতে, করোনা এবং ক্যানসার, এই দুই ভীতির টানাপড়েনে অনেক রোগীরই সমস্যা জটিল হয়েছে।
সেই পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক, জানাচ্ছেন ক্যানসার চিকিৎসক সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানাচ্ছেন, সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে রোগী ও পরিজন, সকলেই করোনার ভয় পেয়েছিলেন। রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সংক্রমিত হওয়ার আতঙ্ক ছিল। তাঁরা বুঝতে পারছিলেন না, যে হাসপাতালে ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে যাচ্ছেন সেখানে করোনা-সুরক্ষা কতটা মজবুত। সঞ্জয়বাবু বলেন, “কেমোথেরাপি, রেডিয়োথেরাপির সময়ে ওই জায়গা কতটা সুরক্ষিত, সে সম্পর্কে মানুষের ভরসা তৈরি করাই ছিল প্রতিষ্ঠানের আসল কাজ। সেটা তৈরি হওয়ায় প্রথমে যাঁরা চিকিৎসা করাতে আসছিলেন না, তাঁরা এখন আসছেন।”
কিছু ক্যানসারের অস্ত্রোপচারে সময় দেওয়া গেলেও, কিছু ক্ষেত্রে তা জরুরি ভিত্তিতে করা প্রয়োজন। চিকিৎসকদের কথায় ভরসা রাখা তাই জরুরি বলে মত সুবীরবাবুর। যেমন, পরামর্শ শুনেছিলেন চুঁচুড়ার বাসিন্দা দেবকুমার সামন্তের পরিজনেরা। লকডাউনের মধ্যেই অশীতিপর বৃদ্ধের ঠোঁটে ক্যানসার ধরা পড়ে। তাঁর মেয়ে ধৃতি সামন্তের কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম, ক্যানসারের সঙ্গে কোভিড হলে ফল মারাত্মক হতে পারে। তবে কোভিডের থেকেও ক্যানসারকে তখন বেশি ভয় পেয়েছিলাম। তাই অস্ত্রোপচারে রাজি হয়ে যাই। বাবা এখন সুস্থ।’’
করোনার জন্য মাস দুয়েক দেরি হলেও একটা সময়ে চিকিৎসা করাতে আসতেই হয়েছে। কারণ কোভিড ১৯-এর ভয়ের থেকেও ক্যানসারের ভীতিটা বেশি। তাই রোগীরাও এ বার ক্যানসারের চিকিৎসাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, জানালেন ক্যানসার চিকিৎসক রোজ়িনা আহমেদ। তিনি বলেন, “করোনার ভয় থাকলেও শরীরে থাকা ক্যানসারের উপসর্গ ধীরে ধীরে প্রকট হচ্ছে। রোগী যখন সেই কষ্ট বুঝতে পারছেন, তখন সেটাকেই গুরুত্ব দিয়ে তিনি চিকিৎসা করাতে আসছেন।”
তবে কোভিড ভয়কে জয় করে ক্যানসার চিকিৎসায় এগিয়ে আসার প্রবণতা প্রবীণদের মধ্যেই বেশি, মানছে চিকিৎসক মহল। তাদের মতে, ওঁদের দেখে এগিয়ে আসুন অন্যেরাও। না হলে আরও একটি আতঙ্ক গ্রাস করবে সমাজকে।