লেলিহান: জ্বলছে নন্দরাম মার্কেটের ন’তলার একটি গুদামঘর। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
জরুরি সময়ে প্রায় ৩০ মিনিট জল না পেয়ে বসে থাকতে হল দমকলকে। কাজ করল না অগ্নিনির্বাপণের জন্য লাগানো ‘স্প্রিঙ্কলার’ও। এর জেরেই শনিবার দুপুরে ব্রেবোর্ন রোডে নন্দরাম মার্কেটের আগুন ছড়িয়ে পড়ল এক গুদাম থেকে আর একটি গুদামে। পরে দমকলের পাম্পিং স্টেশন থেকে জল নিয়ে এসে আগুন নেভানো হয়। তত ক্ষণে দু’টি কাপড়ের গুদাম পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলে জানায় পুলিশ।
২০০৮ সালের ১১ জানুয়ারি রাতে আগুন লেগেছিল নন্দরাম মার্কেটে। সেই ভয়াবহ স্মৃতি ফিরিয়ে এ দিন দুপুর তিনটে নাগাদ আগুন লাগে নন্দরাম মার্কেটের ন’তলার কাশীরাম ব্লকে। সেখানকার একটি তালাবন্ধ গুদাম থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। ব্যবসায়ীরা নিজেরাই ১৩ তলা ওই ভবনের ছাদের জলাধার থেকে সরু পাইপে জল এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। মিনিট দশেকের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ছ’টি ইঞ্জিন। তবে দমকলকর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করার ৩০ মিনিটের মধ্যেই জলাধারের জল ফুরিয়ে যায় বলে দমকলের অভিযোগ।
তখন প্রায় তিরিশ মিনিট কার্যত বসে থাকতে হয় দমকলকর্মীদের। আগুন দেখতে উৎসুকের ভিড়ে বন্ধ হয়ে যায় ব্রেবোর্ন রোডের এক দিক। হাওড়া সেতুতে যান চলাচলও প্রায় ২০ মিনিট বন্ধ রাখতে হয় পুলিশকে। বিকেল পাঁচটা নাগাদ সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ পাম্পিং স্টেশন থেকে জল নিয়ে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে দমকল। যদিও ব্যবসায়ীদের অনেকেরই দাবি, দমকলের হোস-পাইপেও ছিদ্র ছিল। জলের বেগ বাড়লেই জল বেরিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। অন্ধকারের মধ্যে টর্চ জ্বেলে প্লাস্টিক দিয়ে পাইপ বাঁধতে দেখা যায় দমকলকর্মীদের। ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা এর পর দমকলের ডিজি জগমোহনকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল।
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে ২০১৬ সালে মার্কেট চালুর অনুমতি দেয় প্রশাসন। সেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়েই এ দিন ফের প্রশ্ন উঠল। কেন ‘স্প্রিঙ্কলার’ কাজ করেনি, কেন জলাধারে পর্যাপ্ত জল ছিল না, কেনই বা দমকলকে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হল? উত্তর রাত পর্যন্ত মেলেনি। দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, ‘‘খুব সরু রাস্তা। তার উপর জল ছিল না। সমস্যা হয়েছে।’’ দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘মার্কেটে জল ছিল না শুনলাম। খতিয়ে দেখতে হবে।’’
যে গুদামে আগুন লেগেছিল, তার মালিক অমিত গুপ্তের প্রশ্ন, ‘‘মালিক নিয়ম করে টাকা নিচ্ছে। জল থাকছে কি না, স্প্রিঙ্কলার কাজ করছে কি না, তা-ও দেখতে হবে?’’ নন্দরাম মার্কেটের মালিক মানিকচাঁদ শেঠিয়াকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ। ডাক্তার দেখাতে এসেছি।’’