আরও একটি প্রাণ নিল সোয়াইন ফ্লু। বৃহস্পতিবার রাতে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে মৃত্যু হল সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত এক প্রৌঢ়ার। এ নিয়ে এক মাসের মধ্যে এই রাজ্যে সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন চার জন।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবার হুগলি জেলার গোঘাটের বাসিন্দা গৌরী মুখোপাধ্যায় (৬৪) ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কয়েক সপ্তাহ ধরেই তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্ট, হাত-পায়ে যন্ত্রণার উপসর্গও দেখা দিয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। একাধিক অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল ওই রোগিণীকে। তাঁর শারীরিক পরীক্ষায় জানা গিয়েছিল, ওই মহিলা সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত। তবে পরীক্ষার রিপোর্ট দেরিতে মেলে। তাই চিকিৎসা দেরিতে শুরু হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সোয়াইন ফ্লু-র রিপোর্ট দেরিতে পাওয়া যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা দেরিতে হওয়ার জেরেই এই সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসা করার মতো সময়ই পাওয়া যাচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লু-র পরীক্ষা করাতে প্রায় ছ’হাজার টাকা খরচ হয়। তবে অধিকাংশ চিকিৎসক এখন ‘কম্প্রিহেনসিভ ভাইরাল টেস্ট’ অর্থাৎ, একসঙ্গে ১৭টি ভাইরাল পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন। যার খরচ প্রায় ২০ হাজার টাকা।
ব্যয়বহুল এই পরীক্ষা অনেক সময়েই করা কঠিন হয়ে উঠছে। সরকারি স্তরে জ্বরে ভর্তি হওয়া রোগীদেরই সোয়াইন ফ্লু পরীক্ষা হচ্ছে। বহির্বিভাগে রোগীদের পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জ্বর কমার পরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলেই পরীক্ষা করানো দরকার। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকলে রোগীর ভোগান্তি বাড়বে বলেই আশঙ্কা।
উপসর্গ জ্বর, শ্বাসকষ্ট, হাঁচি-কাশি, মাথা ব্যথা, গায়ে যন্ত্রণা, পেটের সমস্যা, কিছু ভাল না লাগা কী করবেন জ্বর কমে যাওয়ার পরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করান হাত-মুখ একাধিক বার পরিষ্কার করুন জ্বর আক্রান্তের নাক-মুখ এবং চোখে চুলকোলে জল দিয়ে ধুয়ে নিন জ্বর আক্রান্তের বাইরে বেরোনো উচিত নয় শুয়োর প্রতিপালকেরা আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন
চলতি মাসেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, বাঁকুড়ার তিন জন সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। হুগলির গৌরীদেবীর মৃত্যু সেই তালিকায় নতুন সংযোজন। তবে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি, ডেঙ্গি পরিস্থিতি যেমন নিয়ন্ত্রণে আছে, তেমনই নিয়ন্ত্রণে আছে সোয়াইন ফ্লু-ও। কোনওটিতেই বিশেষ বিপদ নেই বলে মনে করছে স্বাস্থ্য দফতর। যদিও এক শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘জেলা স্তরে সোয়াইন ফ্লু নিয়ে সতর্কতা জারি হয়েছে।’’
পরজীবী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সোয়াইন ফ্লু নিয়ে সব স্তরে প্রচার জরুরি। শুয়োরের মাধ্যমেই সোয়াইন ফ্লু মানুষের দেহে প্রবেশ করে। শুয়োর প্রতিপালকদের বিশেষ সচেতনতার পাঠ জরুরি। প্রয়োজনে সরকারি স্তরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।