Siddique Kappan

হার না মেনে ভয়কে জয় করার বার্তা

বিপদের আশঙ্কায় সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানকে ট্রেনে এতটা পথ একা ছাড়তে রাজি হননি স্ত্রী রেহানা সিদ্দিকি। রবিবার সুজাতা সদনে ‘আজকের ভারতে সাংবাদিকতা’ নিয়ে আলোচনাসভায় তিনিও দমচাপা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩ ০৭:৩২
Share:

শহরে সস্ত্রীক সিদ্দিক কাপ্পান। রবিবার।  —নিজস্ব চিত্র।

দু’বছর চার মাস কারাবাসের পরে কলকাতাতেই ছিল তাঁর প্রথম অনুষ্ঠান। কিন্তু বিপদের আশঙ্কায় সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানকে ট্রেনে এতটা পথ একা ছাড়তে রাজি হননি স্ত্রী রেহানা সিদ্দিকি। রবিবার সুজাতা সদনে ‘আজকের ভারতে সাংবাদিকতা’ নিয়ে আলোচনাসভায় তিনিও এত দিনের দমচাপা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলেন।

Advertisement

মঞ্চে বসে মালয়ালমে বলা স্ত্রীর কথাগুলো কাপ্পানই হিন্দি-ইংরেজি মিশিয়ে তর্জমা করছিলেন। রেহানার কথায়, ‘‘কাপ্পানের মা অসুস্থ, ৯০ ছুঁই ছুঁই। তিনটে অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চা। আমি ভাবছিলাম, কাঁদলে কী করে ইনসাফ আসবে? তবে বিচারবিভাগ, দেশের সংবিধানে ভরসা ছিল। আমার বর নয়, এক জন সৎ সাংবাদিকের পাশে থেকেছি।’’ কাপ্পানও বার বার বলেছেন, ‘‘হিন্দি, ইংরেজিতে অনভ্যস্ত ঘরোয়া মেয়ে রেহানার জন্য সুপ্রিম কোর্ট, লখনউয়ের জেলে ছোটাছুটি সোজা ছিল না। ওর লড়াইটা আমার থেকেও কঠিন।’’

হাথরসে কাপ্পানের সাংবাদিকতা করতে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলেও রেহানা বলেছেন, ‘‘আমিও তো মেয়ের মা! তাই কী করে চুপ থাকতাম!’’ সাংবাদিকতার অলিখিত নিয়ম হল, খবর করা, খবর হওয়া নয়। এই প্রসঙ্গটির সূত্রে ইউএপিএ মামলায় অভিযুক্ত কাপ্পান বলছিলেন, ‘‘হাথরসে যাওয়া নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু ধর্ষণের পরে নিহত একটি দলিত মেয়েকে পুলিশ-প্রশাসন কেন বাড়িতে না জানিয়েই পুড়িয়ে দিল, এর উত্তর জানতে হত। সাংবাদিক হিসেবে এটা আমার কাজই ছিল।’’

Advertisement

মথুরার কাছে টোল প্লাজ়ার পুলিশ আটকানোর পরে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার কাছ থেকে আসা প্রশ্নমালাও সম্ভবত ভুলতে পারবেন না কাপ্পান। পিপলস ফিল্ম কালেক্টিভ আয়োজিত অনুষ্ঠানে দ্বৈপায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপচারিতার সময়ে তিনি বলছিলেন, “আমি কি পাকিস্তানে গেছি বা আমি কি বিফ খাই থেকে আমি কি জেএনইউ-তে পড়েছি, আমি সিপিএম না মাওবাদী— এ সব প্রশ্নও শুনতে হয়েছে। লখনউয়ের জঙ্গি দমন পুলিশ থেকে সেনা গোয়েন্দা প্রথম দিনই জেরা করে। পুলিশ প্রথম দিন চড়-থাপ্পড় মেরেছিল। এর পরে জেল ছিল মানসিক নির্যাতনের আখড়া!” কাপ্পানের কথায়, ‘‘জেলে চাইলে গাঁজা, বিড়িও মেলে, শুধু বই-খাতার অভাব! এটাও কম কষ্টের ছিল না।’’

আজকের ভারতে মূল ধারার সংবাদমাধ্যমের ছোট একটি অংশ ছাড়া বাকিরা শাসকের কাছে বিকিয়ে যাওয়ায় আক্ষেপ করেছেন ৪২ বছরের কাপ্পান। তাঁর কথায়, ‘‘গৌতম নওলাখার মতো প্রবীণ সাংবাদিক জেলে, উত্তরপ্রদেশে অনেক সাংবাদিক প্রাণ হারাচ্ছেন। সামান্য আশার আলো বাদ দিলে অবস্থা ভয়াবহ!” কাপ্পানের ধারণা, দিল্লিতে সাংবাদিকতা করার সময়ে গৌরী লঙ্কেশ হত্যা থেকে নানা প্রতিবাদে জড়িয়েই তিনি শাসকের নিশানা হন।

আলাপচারিতার শেষে উড়ান ধরার সময় এগিয়ে আসছে বলে উসখুস করছিলেন কাপ্পান। জামিনের নিয়মমাফিক আজ, সোমবার কেরলের মলপ্পুরামে স্থানীয় থানায় তাঁকে হাজিরা দিতেই হবে। বিমান ধরার তাড়ার মধ্যে তাই কাপ্পান বললেন, “সপ্তাহে প্রতি সোমবার থানায় হাজিরা ছাড়াও দু’সপ্তাহ অন্তর লখনউয়ে কোর্টে যেতে হয়! কেরল থেকে ট্রেনে লখনউ আসা-যাওয়ায় গোটা সপ্তাহ লাগে। যার এই জীবন, তাকে কি মুক্ত বলবেন? আমি এখনও ‘ওপেন জেলে’ আছি!’’

তবু প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া, কয়েক জন সাংসদ, সাংবাদিককে ধন্যবাদ দিচ্ছেন কাপ্পান। রেহানাও বলছেন, ‘‘দেশের বেশির ভাগ লোক ভাল বলেই আমরা লড়তে পারছি।” আর কাপ্পানের শেষ কথা, “আমি ভয় পাইনি, দেশকে এটা বলতেই কলকাতায় আসা!’’ সাংবাদিকের নির্ভীক উচ্চারণের আঁচ মেখেই ভরা সভাঘর উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে কুর্নিশ করেছে এ দিন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement