পারকিনসন্সে আক্রান্ত ওই রোগীকে সুস্থ করতে মস্তিষ্কে পেসমেকার বসানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। প্রতীকী ছবি।
ওষুধ খেয়ে কিছু দিন সুস্থ থাকতেন। তার পরে ফের শরীরে দুলুনি ভাব অনুভব করতেন হাওড়ার বাসিন্দা, বছর ছেচল্লিশের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ক্রমশ জড়তা গ্রাস করছিল তাঁকে। প্রায় সাত বছর এমন চলার পরে, পারকিনসন্সে আক্রান্ত ওই রোগীকে সুস্থ করতে মস্তিষ্কে পেসমেকার বসানোর সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। সরকারি স্তরে এসএসকেএমের বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেসে (বিআইএন) এই প্রথম এমন অস্ত্রোপচার হল।
সোমবার ছুটি দেওয়া হয়েছে অনিমেষ বেরা নামে ওই যুবককে। তিনি এখন নিজে থেকে দাঁড়াতে ও কথা বলতে পারছেন। বিআইএনের স্নায়ুরোগ চিকিৎসার বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক-চিকিৎসক অতনু বিশ্বাস বলেন, ‘‘যাঁরা মারাত্মক রকমের পারকিনসন্সে আক্রান্ত, তাঁদের মস্তিষ্কে পেসমেকার বসানো এর আগে সরকারি স্তরে হয়নি। কয়েকটি বেসরকারি জায়গায় এই অস্ত্রোপচার হলেও তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।’’ জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি হায়দরাবাদ থেকে স্নায়ু শল্য ও নিউরো মেডিসিনের দুই চিকিৎসক বিআইএনে আসেন। তাঁরা-সহ অতনু, নিউরো মেডিসিনের আর এক চিকিৎসক অদ্রীশ মুখোপাধ্যায়, স্নায়ু শল্য বিভাগের প্রধান শিক্ষক-চিকিৎসক শুভাশিস ঘোষ মিলে প্রায় আট ঘণ্টা ধরে ওই ব্যক্তির অস্ত্রোপচার করেন।
শুভাশিসের কথায়, ‘‘এই অস্ত্রোপচারে অত্যাধুনিক একাধিক যন্ত্র প্রয়োজন হয়। সেগুলি সরকারের থেকে পেয়েছি। আবার, রোগীর মস্তিষ্কের যে জায়গায় অস্ত্রোপচার করা হবে, সেখানে জ্যামিতিক হিসাবনিকাশও খুব সূক্ষ্ম ভাবে করতে হয়। সব দিক ঠিক করে ব্রেন-পেসমেকার বসানো শুরু হল।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মস্তিষ্কের ভিতরে যে স্নায়ুগুচ্ছ থেকে পারকিনসন্সের সমস্যার উৎপত্তি, প্রথমে সেখানে দু’টি সরু তার প্রবেশ করানো হয়। এর পরে ত্বকের নীচ দিয়ে সেই তার নামিয়ে আনা হয় বুকে। তার পরে পেসমেকার বসিয়ে, সেটির সঙ্গে ওই দু’টি তার যুক্ত করা হয়। তারের মাধ্যমেই বৈদ্যুতিক তরঙ্গ স্নায়ুগুচ্ছে প্রবেশ করে।