গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নজরুল মঞ্চের কলেজ ফেস্টে বিশৃঙ্খলা এবং তার অব্যবহিত পরে গায়ক কেকে-র মৃত্যু রাজ্যের ছাত্র রাজনীতিতে একটা ‘মোড় ঘোরানো’ ঘটনা হয়ে রইল। যে ঘটনার ফলে সাধারণ ভাবে কলেজ ফেস্ট আয়োজনের ক্ষেত্রে দলীয় ‘অনুশাসন’ জারি করা হল। এবং বর্তমান শাসকদলের শাখা সংগঠন তা বাধ্য ছাত্রের মতো মেনেও নিল।
ব্রাত্যর কথায়, ‘‘নজরুল মঞ্চের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। অনভিপ্রেত। এর পর থেকে যে কোনও কলেজ ফেস্টের সরকারের নজর থাকবে।"
নজরুল মঞ্চের ‘উচ্ছৃঙ্খল এবং বেলাগাম’ জনতা, নির্দিষ্ট আসনসংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি লোকের ঢুকে পড়া, যার ফলে বাতানুকূল যন্ত্রের কাজ না করা, চড়া আলোয় গরম আরও বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে গায়ক কেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এবং তারই পরিণতিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে।
বস্তুত, রাজ্যের বিরোধীদল বিজেপি বিষয়টিকে পুরোদস্তুর ‘রাজনৈতিক’ ফয়দা তোলার কাজে ব্যবহার করতে ময়দানে নেমে পড়েছে। একদিকে যেমন ওই ঘটনার জন্য তৃণমূলকে দায়ী করেছেন বিজেপি সাংসদ তথা সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, তেমনই অন্যদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে ওই ঘটনায় নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। তৃণমূলও সাধ্যমতো ওই অভিযোগের জবাব দিয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক ঘটনাপ্রবাহে তাঁরা যে ‘বিড়ম্বিত’, তা দলের নেতারাও একান্তে মেনে নিচ্ছেন। সেই কারণেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টাও শুরু হয়েছে।
একদিকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব দলের ছাত্র সংগঠনকে বার্তা দিয়েছেন, নজরুল মঞ্চে আর যেন কলেজ ফেস্টের আয়োজন না করা হয়। শুধু তা-ই নয়, শীর্ষনেতৃত্বের আরও নির্দেশ— কলেজ ফেস্টে যেন কোনও ভাবেই ‘বহিরাগত’ পড়ুয়ারা যোগ না দেন। এই দ্বিতীয় নির্দেশটি সরাসরি নজরুল মঞ্চে গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের ফেস্টে বেলাগাম ভিড়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যে প্রেক্ষাগৃহের আসনসংখ্যা মেরেকেটে ২,৫০০ জন, সেখানে ৭,০০০ লোকের ভিড় হয়েছিল। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘‘পাঁচিল টপকে টপকে লোকজন ঢুকেছিল!’’ যা তিনি বলেননি, ওই ফেস্টের আয়োজন হয়েছিল সংশ্লিষ্ট কলেজের তৃণমূল-শাসিত ছাত্র সংসদের উদ্যোগেই। ফলে লোক ঢোকা এবং তার ফলে বেসামাল ভিড়ের দায়িত্বও তাদেরই। বা সামগ্রিক ভাবে তৃণমূলে ছাত্র পরিষদের রাজ্য সংগঠনের। কারণ, সংগঠনের প্রথম সারির নেতারাও কেকে-র অনুষ্ঠান শুরুর আগে সেখানে গিয়েছিলেন।
তবে বৃহস্পতিবার টিএমসিপি নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন, শীর্ষ নেতৃত্বের ‘অনুশাসন’ মেনেই এ বার থেকে কলেজ ফেস্টের আয়োজন করা হবে।
ফিরহাদ জানিয়েছেন, তাঁর কাছে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)-র তরফে সুপারিশ করা হয়েছে, কলেজ ফেস্টের জন্য যেন নজরুল মঞ্চকে ব্যবহার করা না হয়। কারণ, সেখানে ভিড় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের উপর পুলিশ কোনও রকমের জোর খাটাতে পারে না। সেই সুযোগ নেয় ছাত্র সংগঠনগুলি। পাশাপাশি, ফেস্ট শেষ হতেই দেখা যায় প্রেক্ষাগৃহের একাধিক চেয়ার ভাঙাচোরা। আগে নজরুল মঞ্চ বাতানুকূল ছিল না। এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় এত ভিড়ের ফলে সমস্যা হচ্ছে।
এর পরেই দলের তরফে টিএমসিপিকে বার্তা দেওয়া হয়, নজরুল মঞ্চে আর কলেজ ফেস্ট নয়। শুধু তা-ই নয়, যে কলেজের ফেস্ট, সেখানে শুধু সেই কলেজের পড়ুয়ারাই যেন অংশ নেন। বাইরের কেউ ফেস্টে যাতে না থাকে, তা নিয়েও ছাত্র সংগঠনকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। ফেস্টের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশও দেয়া হয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে।
তাঁরা যে সেই দলীয় অনুশাসন মেনেই এ বার থেকে ফেস্ট করবেন, তা জানিয়েছেন টিএমসিপি রাজ্যনেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য সুপ্রিয় চন্দ বলেন, ‘‘এখন যাঁরা আমাদের দলের শীর্ষ নেতৃত্বে আছেন, তাঁদের প্রায় সকলেই ছাত্র রাজনীতির ফসল। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থানও ছাত্র রাজনীতি থেকেই। ওঁরা যা বলবেন, আমরা সে কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলব। কারণ, ওঁরা ছাত্রছাত্রীদের ভালর জন্যই বলবেন। এটা আমরা সকলেই মানি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।