election commission

খাস কলকাতায় ৪০ বছরের বাস, তবু নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে তলব নির্বাচন কমিশনের, আশঙ্কা এনআরসি-র!

নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সম্প্রতি ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভোটার কার্ডে যে ঠিকানা থাকে, সেখানে আদৌ ভোটাররা থাকেন কি না বা ভুয়ো ভোটার রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখে কমিশন।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯ ১৯:৫৯
Share:

মেহের আলি রোডের বাড়িতে আব্দুর রাউফ এবং তাঁর স্ত্রী মুস্তাবসেরা। নিজস্ব চিত্র।

এক ঝলক দেখলেই মনে হবে চারতলা বাড়িটির ভালই বয়স। ঠিকানা, ৭ নম্বর মেহের আলি রোড। এখানেই দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা চতুরঙ্গ পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক আব্দুর রাউফ। স্ত্রী মুস্তাবসেরা একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াতেন। ছেলে কিছু দিন হল সহকারী অধ্যাপকের চাকরি পেয়েছেন নেদারল্যান্ডসের একটি বিশ্ববিদ্যালয়।

Advertisement

গত ৬ জুলাই পাঠানো নির্বাচন কমিশনের একটি চিঠি রউফ পরিবারের এই তিন সদস্যকে রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে। ওই চিঠিতে কমিশন জানিয়েছে, ৭ নম্বর মেহের আলি রোডের ঠিকানার বাসিন্দা নন (শিফটেড) আব্দুর সাহেবের স্ত্রী মুস্তাবসেরা ও ছেলে আসাদ। কিন্তু গৃহকর্তার নামে এমন কোনও চিঠি আসেনি। শুধুমাত্র স্ত্রী ও পুত্রকে কমিশন কার্যত‘গৃহহীন’ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ আব্দুর সাহেবের।

শুধু তাই নয়, বাড়িতে গিয়ে কমিশনের প্রতিনিধি নোটিসও ধরিয়ে দেন। ১৪ জুলাই দু’জনকে হাজিরা দিতে বলা হয়। এই নোটিস পাওয়ার পর রীতিমতো হতবাক মুস্তাবসেরা! তাঁর প্রশ্ন, একই পরিবারে একজনকে বাদ দিয়ে বাকি দু’জনের নামে এমন চিঠি কী করে আসে?

Advertisement

আরও পড়ুন, পঞ্চায়েতের ভোটাররাও পাবেন পুর পরিষেবা

নোটিস পাওয়ার পর গোপালনগরে দক্ষিণ কলকাতার নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে হাজিরা দিতে যান মুস্তাবসেরা। তিনি ছেলের লেখা একটি চিঠিও নিয়ে যান সেখানে। এত দিন ধরে কলকাতায় থাকার পরেও, তাঁকে এখানকার বাসিন্দা বলে প্রমাণও দিতে হয় বলে আক্ষেপ মুস্তাবসেরা রউফের। নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ তিনি।

ছেলেও যে ওই ঠিকানার বাসিন্দা, সে বিষয়েও নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের বোঝাতে হয়েছে। বিদেশ থেকে ছেলের লেখা একটি চিঠিও তিনি কমিশনে জমা করেছেন। মুস্তাবসেরার কথায়: “৪০ বছর একই কলকাতায় থাকার পরেও আমাকে বলা হল ‘শিফটেড’। দিতে হল প্রমাণ। তার পর ওঁরা বলেন, ভুল হতে পারে!”


নির্বাচন কমিশনের চিঠি এবং মুস্তাবাসেরার ভোটার কার্ড।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সম্প্রতি ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভোটার কার্ডে যে ঠিকানা থাকে, সেখানে আদৌ ভোটাররা থাকেন কি না বা ভুয়ো ভোটার রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখে কমিশন। এটা প্রতিবছরই হয়ে থাকে। যদি দেখা যায়, সেই ঠিকানায় ভোটার নেই, তাহলে তালিকা থেকে সেই নাম বাদ যায়।

আরও পড়ুন, দশ বছরে এত রুখা আষাঢ় আগে দেখেনি মহানগর

এখানেই প্রশ্ন মুস্তাবসেরার স্বামীর, তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার কোনও অসৎ উদ্দেশ্য কাজ করছে না তো? অসমের মতো এখানেওএনআরসি হচ্ছে না তো! যেহেতু এনআরসি করা যাচ্ছে না, তাই সরকারি প্রোগ্রামের মধ্যেই এনআরসি-র উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। নোটিস পাঠানোর আগে বাড়ি এসে খতিয়ে দেখা উচিত ছিল কমিশনের আধিকারিকদের। তা হয়নি। সেটা যদি হতো তাহলে এমন চিঠি বাড়িতে আসত না বলে মনে করছেন আব্দুর রাউফ।


নির্বাচন কমিশনে পাঠানো আব্দুর রাউফের ছেলে আসাদের সেই চিঠি।

আদৌ বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর করা হয়েছিল? রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “রাজ্য জুড়েই ভোটার তালিকা সংশোধন করে তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা নির্দিষ্ট এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর করে রিপোর্ট দিয়ে থাকেন। ওই ঠিকানায় কেউ না থাকলে, ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়। যাঁরা অভিযোগ করছেন, সেখানেও সরেজমিন খতিয়ে দেখার কথা। তার পর নোটিস যাওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে এমন বিভ্রান্তি কেন হল, তা নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখা হবে।”

(শহরের সেরা খবর, শহরের ব্রেকিং নিউজ জানতে এবং নিজেদের আপডেটেড রাখতে আমাদের কলকাতা বিভাগ পড়ুন।)

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement