বিধাননগর পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
গার্ডেনরিচের আজহার মোল্লা বাগানের নির্মীয়মাণ পাঁচতলা বাড়ি ভেঙে দশ জনের মৃত্যুর পরে নড়ে বসল বিধাননগর পুর প্রশাসন। পুরসভার আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে গত দু’দিন ধরে দফায় দফায় বৈঠক করে পুর কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিচ্ছেন, কোথায়, কত অবৈধ বাড়ি রয়েছে। সেই সব বাড়ির কতগুলির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে, কতগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যাতে যে কোনও নির্মাণস্থলে পুরসভার অনুমোদিত নকশা রাখা থাকে।
এ হেন পরিস্থিতিতে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষকে এক হাত নিয়েছেন পুর চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত। তিনি জানান, পুর এলাকার অবৈধ নির্মাণ নিয়ে কী ব্যবস্থা হচ্ছে, তা জানতে কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার চিঠি লিখেও তিনি সদুত্তর পাননি। সব্যসাচী বলেন, ‘‘অবৈধ নির্মাণের তথ্য বাড়ির নম্বর ধরে ধরে পাঠিয়েছি পুর কর্তৃপক্ষ তথা প্রশাসনকে। কিছুই হয়নি।’’ উল্লেখ্য, অবৈধ নির্মাণ নিয়ে পুর বোর্ডের বৈঠকে একাধিক বার সরব হয়েছেন সব্যসাচী। মূলত তাঁর উদ্যোগেই সল্টলেকের সংযুক্ত এলাকার অধীন ৩৫ এবং ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে এক সময়ে তিনশো অবৈধ বাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। কলকাতা হাই কোর্টও নির্দেশ দিয়েছিল, সেই সব অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দিতে। স্থানীয় বাধায় সেই সব বাড়ি ভাঙা যাচ্ছে না বলেই দাবি পুরসভার।
এ দিকে, সব্যসাচীর মন্তব্যের বিরোধিতা করে বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুর বিষয়ক কোনও কথা বলার জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। আমরা এমন সমস্যার বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করছি।’’
বুধবার একটি বৈঠকে ঠিক হয়েছে, বিধাননগর পুরসভার ছ’টি বরোর প্রতিটিতে বিশেষ দল তৈরি করা হবে। সেই দলের নেতৃত্বে থাকবেন এক জন করে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। প্রতিটি এলাকায় নিয়ম মেনে নির্মাণ হচ্ছে কি না, কাজ বন্ধের নোটিস লঙ্ঘন করে ফের নির্মাণ হচ্ছে কি না, এ সবের উপরে নজর রাখবে ওই বিশেষ দল। অবৈধ নির্মাণ ঠেকাতে গত বছর একটি বিশেষ দল তৈরি করেছিল বিধাননগর পুরসভা। কর্তৃপক্ষের দাবি, সেই দল তদন্ত করে ১৫০টি নির্মাণকে আইন লঙ্ঘনের নোটিস পাঠিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। ৭৫টি নির্মাণের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। এক বছরে ৩০টি এফআইআর করা হয়েছে।
পুরসভা দাবি করছে, বিধাননগর এলাকায় বাড়ির নির্মাণে ব্যাঙ্ক ঋণের জন্য পুরসভার ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক হওয়ার পরে অবৈধ নির্মাণ খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু যে সব অবৈধ বাড়ি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে, সেগুলির কী হবে, তা স্পষ্ট নয় পুর মহলে।