—প্রতীকী চিত্র।
চার বছর পরে ফের কলকাতার পুজো তার চেনা ভিড়ের ছন্দ ফিরে পেয়েছে। রাস্তায় বেরোনো লোকজনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের মুখ দেখেছে সরকারি এবং বেসরকারি গণপরিবহণ। শহরতলির ট্রেন ও মেট্রো ছাড়াও অনেক দিন পরে বাসে যাত্রীদের ভিড় মালিকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। আয়ের নিরিখে পিছিয়ে থাকেনি সরকারি পরিবহণ নিগমের বাসও। দীর্ঘ সময় লোকসানের বহরে রীতিমতো ধুঁকতে থাকার অবস্থা কাটিয়ে উঠে লক্ষ্মী লাভের মুখ দেখেছে তারাও।
পঞ্চমী থেকে দশমীর মধ্যে মেট্রো এ বার ছ’কোটি টাকা আয় করেছে। অন্য দিকে, শিয়ালদহ ডিভিশনের শহরতলির ট্রেনে সব চেয়ে বেশি ভিড় হয়েছিল সপ্তমীতে। ওই দিন যাত্রী সংখ্যা ছিল ১৯ লক্ষ ২৩ হাজার ৪৮০। গত বছর একই দিনে ট্রেনে সফর করেছিলেন ১৭ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯২ জন। এ বারের পুজোর বাকি দিনগুলির পরিসংখ্যানও বলছে, গত বছরের তুলনায় রোজই এক থেকে দেড় লক্ষ যাত্রী বেশি সফর করেছেন। সব মিলিয়ে এর প্রতিফলন দেখা গিয়েছে রেলের রোজগারের অঙ্কে। শুধু সপ্তমীতেই শিয়ালদহ ডিভিশনের আয় হয়েছে ২ কোটি ১০ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩৮৫ টাকা। পঞ্চমী থেকে দশমীর মধ্যে অন্য দিনগুলিতেও আয় ১ কোটি ৫০ লক্ষ থেকে ১ কোটি ৯০ লক্ষের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। পূর্ব রেলের হাওড়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
ট্রেনের পাশাপাশি কলকাতা ও তার লাগোয়া অঞ্চলের যাত্রীদের অনেকে বাস ও মেট্রোতেও চেপেছেন। ফলে, সরকারি ও বেসরকারি বাসও আশানুরূপ সংখ্যায় যাত্রী পেয়েছে। অনেকটা ভাল আবহাওয়ায় এ বার পুজো পড়ায় যাত্রী পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন বেসরকারি বাসমালিকেরা।
চতুর্থী থেকে নবমী, এই ছ’দিন শহরের অধিকাংশ বাস রুট বছরের অন্য সময়ের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ পর্যন্ত বেশি ব্যবসা করেছে বলে জানাচ্ছেন বাসমালিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। দশমীতে বাস কম থাকলেও বড় পুজো রয়েছে এমন বেশ কিছু রুটে ভোর পর্যন্ত বাস চলেছে। এ হেন লক্ষ্মী লাভে খুশি মালিক থেকে শুরু করে বাসকর্মীরা। ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘প্রশাসন প্রথম থেকেই সদর্থক ভূমিকা নেওয়ায় এ বার বাস মসৃণ ভাবে চলাচল করতে পেরেছে। আয় বৃদ্ধি তারই ইঙ্গিত।’’
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু বলেন, ‘‘পুলিশ কমিশনারেটগুলির সহযোগিতায় এ বার পরিষেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখা সম্ভব হয়েছে।’’ বেসরকারি বাসমালিক সংগঠনের নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, পুজোর সময়ে তাঁদের গড় দৈনিক আয় হয়েছে আট থেকে দশ হাজার টাকা। যা সার্বিক ভাবে গণপরিবহণের রুগ্ণ দশা কাটার পক্ষে শুভ ইঙ্গিত বলে দাবি তাঁদের।
পিছিয়ে থাকেনি সরকারি বাসও। চতুর্থী থেকেই বেশি রাত পর্যন্ত বাস চালাতে উদ্যোগী হয়েছিল কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম, রাজ্য পরিবহণ নিগম এবং ট্রাম কোম্পানি। এ ছাড়া, পুজো পরিক্রমার পরিষেবাতেও ভাল সাড়া মিলেছে। কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায় বাস চালিয়ে নিগমগুলি প্রায় ২ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা আয় করেছে। যাকে যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক বলছেন আধিকারিকেরা।