দু’দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে ইয়াসমিন নিগার খান এবং এ শহরের কাবুলিওয়ালারা। বৃহস্পতিবার, পার্ক সার্কাসে। নিজস্ব চিত্র
‘স্বাধীনতা’ শব্দটা কেমন যেন বেয়াড়া ঠাট্টা এখন তাঁদের কাছে। বছরের পর বছর এ দেশে থেকেও প্রতি বারের ১৯ অগস্ট-ই তাঁদের জীবনে হানা দেয় এক অন্য মহিমায়। কলকাতার বিভিন্ন ডেরায় বাস করা কাবুলিওয়ালাদের জন্য এই দিনটা নিজেদের মধ্যে একটু মেলামেশা, খাওয়াদাওয়া, সামাজিকতার উপলক্ষ।
২০২১-এ দাঁড়িয়ে সেই দিনটার মানে পাল্টে গিয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগে, উল্টে নিজেদের স্বাধীনতা যেন হারিয়েই ফেলেছে আফগানিস্তান। এমন বিষণ্ণ স্বাধীনতা দিবস তাঁদের জীবনে শেষ কবে এসেছে? বৃহস্পতিবার বিকেলে সার্কাস অ্যাভিনিউয়ে ‘অল ইন্ডিয়া পাখতুন জিরগা-ই-হিন্দ’-এর দফতরে বসে সেটাই আলোচনা করছিলেন গুটিকয়েক কাবুলিওয়ালা।
পাখতুন বা পশতুভাষী এ দেশে কম-বেশি ১০ লক্ষ আছেন বলে কয়েক বছর আগেও নিশ্চিত ছিলেন পাখতুনদের সংগঠনের সভানেত্রী ইয়াসমিন নিগার খান। তাঁর কাছে এই মুহূর্তে ঠিকঠাক হিসেব নেই। তবে পশ্চিমবঙ্গ ও অসমেই কাবুলিওয়ালাদের সংখ্যা সব থেকে বেশি বলে তাঁর দাবি। উপমহাদেশের ইতিহাসে
ব্রিটিশদের থেকে আফগানিস্তানের স্বাধীনতা অর্জন একদা ভারতকেও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়তে প্রেরণা জুগিয়েছিল। ব্রিটিশদেরও যে যুদ্ধে হারানো যায়, তা আফগানিস্তানের পাঠানদের দেখেও এক দিন টের পেয়েছে ভারত। তালিবানের সামনে সেই আফগান সেনার এত সহজে আত্মসমর্পণ দেখে মর্মাহত ভারতে বসবাসকারী পাখতুন বা পাঠানেরা। ইয়াসমিন বলছিলেন, ‘‘অন্যান্য বছর এই দিনটা আমরা পালন করি না। কিন্তু এ বছর আলাদা পরিস্থিতি। এই স্বাধীনতা দিবস পালন আসলে তালিবানের আফগানিস্তান দখলের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ!’’
ভারত ও আফগানিস্তান— এ দিন দু’দেশের পতাকা হাতে যাঁরা জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই কিন্তু ভারতীয় নাগরিক। তবে শিকড় আফগান মুলুকে। পাখতিকা, কাবুল, হেরাট, গজনিতে অনেকেরই পরিবার রয়েছে। আখমাদ খান নামে জনৈক কাবুলিওয়ালা বলছিলেন, ‘‘আমাদের কত জনেরই বাড়ির লোক আফগানিস্তানে। কিন্তু সাহস করে ওই বিপদের মধ্যে ঝাঁপাতে পারছি না। দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কী যে ঘটতে চলেছে, তার কিছুই মাথায় ঢুকছে না।’’