প্রতীকী ছবি।
ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মেয়ের বিয়ের বাগ্দান অনুষ্ঠান বলে কথা। তাই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে রবিবার সকালে অসমের রূপসী থেকে কলকাতাগামী উড়ানে চেপে বসেছিলেন শিশুরোগ চিকিৎসক বিনায়ক রায়। সে দিনের সন্ধ্যার ওই অনুষ্ঠানে পরার জামাকাপড় থেকে শুরু করে বন্ধু-কন্যার জন্য উপহার— চারটি ব্যাগে সবই ভরে নিয়েছিলেন কোচবিহারের বাসিন্দা বিনায়কবাবু। কিন্তু কলকাতায় পৌঁছে শুরু হয় বিপত্তি।
কলকাতায় বিমান নামার একটু পরেই উড়ান সংস্থার এক মহিলা আধিকারিক এসে জানান, সপরিবার বিনায়কবাবু কলকাতায় এলেও তাঁদের ব্যাগ আটকে রয়েছে সেই রূপসীতেই! ওই আধিকারিক জানান, বিমানের ওজন বেড়ে যাওয়ায় রূপসী থেকে বিমানচালক কিছু জিনিসপত্র নামিয়ে দিয়ে আসেন। যার মধ্যে ছিল বিনায়কবাবুর চারটি ব্যাগও।
ক্ষুব্ধ চিকিৎসক সোমবার ফোনে বলেন, “সমস্ত জামাকাপড় ছিল ব্যাগে। এ দিকে রবিবার রাতেই অনুষ্ঠান। ওদের বললাম, আমাদের নামিয়ে ওই বিমানটির তো রূপসী হয়েই গুয়াহাটি ফেরার কথা। তা হলে সেই বিমান আমাদের ব্যাগগুলো ফিরতি পথে গুয়াহাটি নিয়ে যাক। সেখান থেকে অন্য উড়ানে অন্তত বিকেল-সন্ধ্যার মধ্যে কলকাতায় নিয়ে আসুক। মুখে বলল বটে যে চেষ্টা করছি। কিন্তু আসেনি।” ফলে কলকাতার ফ্ল্যাটে রাখা জামাকাপড় পরেই রাতের অনুষ্ঠানে যেতে হয়েছে তাঁদের।
শুধু বিনায়কবাবুদের ব্যাগই নয়, রবিবারের ওই বিমানের প্রায় ২৩ জন যাত্রীর জিনিসপত্র যে কলকাতায় এসে পৌঁছয়নি, তা এক কথায় স্বীকার করে নিয়েছে ‘ফ্লাই-বিগ’ নামে ওই উড়ান সংস্থা। অতি সম্প্রতি কলকাতা থেকে অসমের ধুবড়ি জেলার রূপসী হয়ে গুয়াহাটি পর্যন্ত তারা সপ্তাহে চার দিন উড়ান পরিষেবা দিতে শুরু করেছে। বিনায়কবাবু জানাচ্ছেন, এর ফলে কোচবিহার-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের সুবিধা হয়েছে অনেকটাই। কারণ কোচবিহারে বিমানবন্দর দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ফলে সেখানকার মানুষকে কলকাতায় পৌঁছতে হলে পাঁচ-ছ’ঘণ্টার পথ পেরিয়ে বাগডোগরা যেতে হয়। বিনায়কবাবুর কথায়, “রূপসীতে পৌঁছতে আমাদের বড়জোর দেড় ঘণ্টা লাগছে। কিন্তু পরিষেবা এমন হলে তো মানুষ ভয় পেয়ে যাবেন! সোমবার ওই সব জিনিসপত্র নাকি গুয়াহাটি ঘুরে কলকাতায় এসেছে। কলকাতার বাইরে আছি বলে তা এখনও আমাদের হাতে আসেনি। কিন্তু বিমানের সহযাত্রীদের মধ্যে এক জনের সোমবার দুবাই যাওয়ার কথা ছিল বলে শুনেছিলাম। তাঁর যে কী হল, কে জানে। এক জন চিৎকার করছিলেন, বাচ্চার ওষুধ রয়েছে ব্যাগে।”
উড়ান সংস্থাটির দাবি, ৭২ আসনের এটিআর বিমান কলকাতায় আসার পথে অধিকাংশ সময়েই ভর্তি থাকছে। তাই আবহাওয়া খারাপ থাকায় চালক বিমানের ওজন কমাতে বলেন। কারণ, প্রয়োজন হলে যাতে অন্য বিমানবন্দরে অবতরণ করা যায়, তার জন্য অতিরিক্ত জ্বালানি নিতে চেয়েছিলেন তিনি। ওই উড়ান সংস্থাটি জানিয়েছে, সোমবার গুয়াহাটি ঘুরে কলকাতায় পৌঁছেছে যাত্রীদের ব্যাগ।