আকাশছোঁয়া: নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাইপাসের ধারে চলছে দেদার হোর্ডিং লাগানো। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে তারা একে অপরকে টেক্কা দেয়! তাদের মুখ দেখেই পথ চলতে হয় ই এম বাইপাসে। অথচ, সেই সব বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ের অধিকাংশকেই ‘বিপজ্জনক’ এবং ‘বেআইনি’ বলে ঘোষণা করেছে পুর প্রশাসন। এ বার বেআইনি বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ে ‘জীবন বিপন্ন’ জানিয়ে বিধাননগর উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন পাড়ার বাসিন্দারা। বিধাননগর পুরসভাতেও অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা।
তবে ওই অভিযোগে আদৌ কাজ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন অভিযোগকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী ই এম বাইপাসের ধারে হোর্ডিংয়ের উচ্চতা মাটি থেকে ২০-২৫ ফুট হওয়াটা বাধ্যতামূলক। তবে সে নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলছে হোর্ডিং লাগানো। কোনওটির উচ্চতা ৮০ ফুট। কোনওটির উচ্চতা আবার মাটি থেকে ১০০ ফুট ছাড়িয়ে যায়। পুরসভা ও পুলিশের চোখের সামনেই হোর্ডিং লাগানো হয়। তবু কেউ বাধা দেয় না। ফলে হোর্ডিং নিয়ে নিয়ম থেকে যায় খাতায় কলমেই।
বিধাননগর পুরসভার এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি, গত তিন মাসে ৩০টিরও বেশি বেআইনি হোর্ডিং বাজেয়াপ্ত করেছেন তাঁরা। এই অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে। বিধাননগর পুরসভার যে এলাকার হোর্ডিং নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেখানকার কাউন্সিলর (৩৪ নম্বর ওয়ার্ড) রাজেশ চিরিমার অবশ্য জানাচ্ছেন, তিনি নিরুপায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমি নিজেই তো ওই হোর্ডিং নিয়ে গত দেড় বছরে তিন বার অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি।’’ তবু কাজ হচ্ছে না? কাউন্সিলরের উত্তর, ‘‘কেন হচ্ছে না, তা নিয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না। সকলেই বুঝতে পারছেন।’’
স্থানীয় সূত্রের দাবি, দত্তাবাদ এলাকায় ই এম বাইপাসের ধারে দীর্ঘদিন আগেই একটি চারতলা বাড়ির সামনে লোহার কাঠামো তৈরি করে হোর্ডিং বসানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। সেই থেকে কয়েক মাস অন্তর সেখানে হোর্ডিং বদলানো হয়। তবে আগে তার উচ্চতা এত বেশি ছিল না। সম্প্রতি ওই হোর্ডিংয়ের উচ্চতা বেড়ে ১০০ ফুটের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। থানার দ্বারস্থ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘হোর্ডিংয়ের উচ্চতা ১০০ ফুট হয়ে যাওয়ায় পিছনের বাড়ি একেবারে ঢাকা প়ড়ে গিয়েছে। এমনকি, রাস্তা থেকে হোর্ডিং যাতে ভাল ভাবে দেখা যায়, তার জন্য সামনের গাছও কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে। দিন কয়েক আগে হোর্ডিংয়ের মরচে পড়া লোহা খুলে পড়েছিল। ওই ঘটনায় একটুর জন্য কয়েক জন বেঁচে গিয়েছেন।’’ আর এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘অভিযোগ জানাতে গেলে স্থানীয় কয়েক জন চাপ দিচ্ছেন। বলছেন, বিজ্ঞাপনের জন্য টাকা নেওয়া হয়ে গিয়েছে। সমস্যা তৈরি করলে দেখে নেওয়া হবে।’’
যদিও বিধাননগর পুরসভার এক আধিকারিক জানান, ই এম বাইপাসের ধারে হোর্ডিং লাগানোর ক্ষেত্রে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই কড়াকড়ি করা হচ্ছে। বর্গফুট-পিছু ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে যেখানে হোর্ডিং বসছে, সেই এলাকার বাসিন্দারা নিরাপদে থাকতে পারছেন কি না, হোর্ডিংয়ের কাঠামোর সামনে এবং পিছনের বাড়ির ‘ভেন্টিলেশন’-এ সমস্যা হচ্ছে কি না, তা ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য হিসেবে দেখা হয়। তা-ও হোর্ডিং নিয়ে কিছুতেই সমস্যা মেটে না। কাউন্সিলর রাজেশবাবুর আবার অভিযোগ, ‘‘হোর্ডিংটি চন্দন আচার্য নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার। তিনি হোর্ডিংয়ের জন্য পুরসভাকে কোনও রকম টাকাও দেন না। নেননি কোনও ছাড়পত্রও।’’ চন্দনের অবশ্য দাবি, ‘‘হোর্ডিং বসানো হয়েছে আমার নিজের জায়গায়। পুরসভা এ জন্য টাকা দাবি করতে পারে না।’’
কড়া আইন থাকলেও আপাতত হোর্ডিং-জটেই আটকে ই এম বাইপাসে বসবাস।