ফাইল চিত্র।
আগামী পয়লা জুলাই থেকে শহরের বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু করে দেবে পুর প্রশাসন। বুধবার পুরসভার অধিবেশন থেকে বেরিয়ে এ কথা জানিয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। কলকাতায় বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে গত ১০ মার্চ বিধানসভায় বিল পাশ করে শাসক দল। তাতে কলকাতা পুর আইনে (বিল্ডিং নিয়মে) ৪১২এ ধারা যুক্ত হয়। এত বছর ধরে শহরে একাধিক বিপজ্জনক বাড়ি মাথা তুলে থাকলেও মানবিকতার খাতিরে হাত গুটিয়ে থাকতে হতো পুর প্রশাসনকে। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বরে পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা চোখ খুলে দেয় তাঁদের। ক্ষুব্ধ হন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে বিল্ডিং আইনে সংযোজন আনে সরকার।
কী ভাবে এই আইন বলবৎ করবে পুর প্রশাসন, তার রূপরেখা তৈরি করে বুধবার সেটিই অধিবেশনে পাশ করল পুরবোর্ড। মেয়র জানান, এ বার তা পাঠানো হবে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে। তাদের সম্মতি এলেই বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে নামবে পুরসভার দল।
পুর কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী, কলকাতায় ‘বিপজ্জনক’ বাড়ির সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। বেশ কয়েকটির হাল এতই খারাপ, সেগুলি যে কোনও সময়ে ভেঙে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। গত সপ্তাহে নারকেলডাঙায় একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে মৃত্যু হয় এক জনের। তাই যত শীঘ্র সম্ভব এই ধরনের বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করতে চায় পুরসভা।
নতুন আইনের ক্ষমতাবলে কী করতে পারবে পুর প্রশাসন?
আইনে বলা হয়েছে, শহরের যে সব বাড়িকে পুরসভা বিপজ্জনক বলে নোটিস দিয়েছে, সে সব বাড়ির বিপজ্জনক অংশ বা পুরো বাড়িটিই ভেঙে ফেলতে হবে। বাড়ি ভাঙার জন্য প্রথম সুযোগ দেওয়া হবে মালিককে। তিনি গররাজি হলে পুর প্রশাসন টেন্ডারের মাধ্যমে ওই কাজে অভিজ্ঞ কোনও সংস্থাকে বরাত দিয়ে তা করাবে। তবে দেখতে হবে, ওই বাড়িতে যে বা যাঁরা বাস করছিলেন, তাঁরা যেন পুনর্বাসন পান। আইনে আরও বলা হয়েছে, বাড়িটি ভেঙে নতুন করে তৈরির কাজ চলাকালীন সেখানকার বাসিন্দাদের অস্থায়ী ভাবে বসবাসের জায়গা ঠিক করে দিতে হবে নির্মাণকারী সংস্থাকেই।
তবে বিধানসভায় পাশ হওয়ার পর থেকেই এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে নানা মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বাড়ির মালিকদের একটি সংগঠনের বক্তব্য, অনেক মালিক নিজেরাই বাড়ি ভেঙে তা তৈরি করতে প্রস্তুত। কিন্তু তাঁদের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় করতে পারছেন না। এ রকম মালিকদের জন্য পুরসভা কিছু ভাবেনি। আবার, বাড়ি ভেঙে নতুন করে তৈরি করতে কেউ গররাজি হলে ‘আইনের জোরে’ তা অন্য কারও হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে পুর প্রশাসন। ওই সংগঠনের বক্তব্য, এটা ‘গা জোয়ারি’। পুরমহলের একাধিক অফিসারের ধারণা, এ সব কারণেই এই আইন কার্যকর করতে গিয়ে পুর প্রশাসনকে বেগ পেতে হতে পারে। তাঁদের কথায়, জমির আসল কর্তৃত্ব মালিকের। তাঁদের বঞ্চিত করে কিছু করা হলেই আদালতে মামলা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।