একই সঙ্গে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে নিকাশি পরিশোধন প্লান্টও (সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) তৈরি করা প্রয়োজন। ওই পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘কিন্তু সেই কাজগুলি করার পরিবর্তে আদিগঙ্গাকে চিরতরে মুছে দেওয়ার সব কাজ করা হচ্ছে।’’
ফাইল চিত্র।
জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মতো আদিগঙ্গার পুনরুজ্জীবনে নোডাল এজেন্সি করা হয়েছে কলকাতা পুরসভাকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজপুর-সোনারপুর পুর এলাকায় পরিস্রুত গঙ্গার জল সরবরাহ করার প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও সেই কারণে নদীর দু’পাড়ে পাইপলাইন বসানোর কাজ কী ভাবে করছে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি? প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ। আরও প্রশ্ন, বিষয়টি কি পুরসভাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়েছে?
এমনিতে আদিগঙ্গার পুনরুজ্জীবন, পাড়ের সৌন্দর্যায়ন-সহ একটি পৃথক প্রকল্পের জন্য সম্প্রতি দরপত্র ডেকেছে হিডকো। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। তার সঙ্গে এ বার যোগ হয়েছে কেএমডিএ গৃহীত রাজপুর-সোনারপুর এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্প। এর ফলে সংশ্লিষ্ট নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ, যা ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত, তার উপরে আরও প্রভাব পড়তে পারে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। শুধু তা-ই নয়, আদালতের নির্দেশে আদিগঙ্গার পুনরুজ্জীবনে প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্যের জন্য একে ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের অর্থসাহায্যে সেই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার মুখে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে আদিগঙ্গা নিয়ে পরিবেশ আদালতে মামলাকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, কংক্রিটের নির্মাণ, জলের পাইপলাইন বসানো-সহ একাধিক কর্মকাণ্ডের ফলে পুনরুজ্জীবনের প্রকল্পই না বাতিল হয়ে যায়! কারণ, এই প্রকল্পের সঙ্গে গৃহীত উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির সরাসরি সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছি। কারণ, এই প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ হলে শহরের মানচিত্র থেকে আদিগঙ্গা পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।’’ আর এক পরিবেশবিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, এখনও শহর থেকে ৭৭টি নালা সরাসরি গিয়ে আদিগঙ্গায় মিশছে। অথচ, দূষণ ঠেকাতে সব চেয়ে আগে নালাগুলির প্রবাহ বন্ধ করা দরকার। একই সঙ্গে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে নিকাশি পরিশোধন প্লান্টও (সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) তৈরি করা প্রয়োজন। ওই পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘কিন্তু সেই কাজগুলি করার পরিবর্তে আদিগঙ্গাকে চিরতরে মুছে দেওয়ার সব কাজ করা হচ্ছে।’’