KMC

KMC: ‘নিধিরাম সর্দার’ পুর বিজ্ঞাপন দফতরের হাতে ফুট ওভারব্রিজের ভার!

পুরসভা অধীনস্থ সব ফুট ওভারব্রিজের দেখাশোনা, রক্ষণাবেক্ষণ-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দায়িত্ব বিজ্ঞাপন দফতরের উপরে ন্যস্ত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২২ ০৭:৩৫
Share:

খালি চোখে কাঠামোর দুর্বলতা চোখে না পড়লেও বিশেষজ্ঞদের কাছে তা ধরা পড়ে। ফাইল ছবি

বিজ্ঞাপনের অসীম ক্ষমতা। তাই বিজ্ঞাপনে শুধু মুখই ঢাকা পড়ে না। বরং ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান, কাঠামো সংক্রান্ত বিষয়ে পারদর্শিতা না থাকা সত্ত্বেও শহরে পুরসভা অধীনস্থ সব ফুট ওভারব্রিজের দেখাশোনা, রক্ষণাবেক্ষণ-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দায়িত্ব বিজ্ঞাপন দফতরের উপরে ন্যস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর মুখ্য পুর ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে চলবে। চলতি মাসে কলকাতা পুরসভা এমনই এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে রীতিমতো বিস্মিত বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

Advertisement

তাঁদের বক্তব্য, ফুট ওভারব্রিজের কাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ, ত্রুটি বুঝতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা ও পারদর্শিতা জরুরি। খালি চোখে কাঠামোর দুর্বলতা চোখে না পড়লেও বিশেষজ্ঞদের কাছে তা ধরা পড়ে। এখন পুর বিজ্ঞাপন দফতরের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নিজস্ব কোনও শাখা নেই, যারা এটি করতে সক্ষম। সেখানে পুরসভার রাস্তা, মুখ্য পুর ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) ও নগর পরিকল্পনা দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা থাকা সত্ত্বেও কেন ফুট ওভারব্রিজ দেখাশোনার দায়িত্ব বিজ্ঞাপন দফতরকে দেওয়া হল, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।

যদিও মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ফুট ওভারব্রিজে বিজ্ঞাপন দেওয়া, তার জন্য দরপত্র ডাকা, এ সবই বিজ্ঞাপন দফতর করে। তাই তাদের এই বিষয়ে নোডাল সংস্থা করা হয়েছে। মেয়রের কথায়, ‘‘এ বিষয়ে পারদর্শী অন্য দফতরগুলির সঙ্গে বিজ্ঞাপন দফতর সমন্বয় রক্ষা করে চলবে।’’

Advertisement

পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, বিষয়টির সঙ্গে জড়িত দফতরগুলির কাছে কর্তৃপক্ষের লিখিত নির্দেশে কিন্তু বলা হয়েছে, বিজ্ঞাপন দফতরের দাবি বা ফরমায়েশ অনুযায়ীই পুরসভার মুখ্য ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নগর পরিকল্পনা দফতর ফুট ওভারব্রিজের ‘সেফটি অডিট’ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এখানেই শেষ নয়। রাজ্য সরকারের অন্য দফতর বা সংস্থার অধীনস্থ ফুট ওভারব্রিজগুলিরও ‘সেফটি অডিট’-এর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞাপন দফতরই সংশ্লিষ্ট দফতর বা সংস্থাকে চিঠি দেবে!

এর পরিপ্রেক্ষিতে এক বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, ‘‘কোন ফুট ওভারব্রিজের সেফটি অডিট আগে প্রয়োজন, কোনটার রক্ষণাবেক্ষণে বেশি জোর দিতে হবে, সেটা বুঝতে নির্মাণ বা কাঠামো সংক্রান্ত পারদর্শিতা চাই। এটা তো একটা প্রযুক্তিগত বিষয়। বিজ্ঞাপন দফতর কী ভাবে সেটা বুঝবে?’’ আর এক বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, ‘‘এই বুঝতে না-পারাটা বিজ্ঞাপন দফতরের কোনও দোষ বা খামতি নয়। ফুট ওভারব্রিজে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং দেওয়া হবে কি না, দিলে তার চার্জ কত হবে, এই সংক্রান্ত বিষয় আর সেফটি অডিট এক জিনিস নয়! কিন্তু দফতরকে যা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা তারা করতে বাধ্য।’’ ফলে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তখন তার দায় কে নেবে? সেই প্রশ্নও উঠেছে।

যদিও ফিরহাদের যুক্তি, ‘‘বিজ্ঞাপন দফতর তো আর সেফটি অডিট করছে না। সেফটি অডিট তো ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরই করবে।’’ প্রশ্ন হল, ‘সেফটি অডিট’ ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর করলে কেন লিখিত নির্দেশে পুরসভার রাস্তা এবং নগর পরিকল্পনা দফতরকে তাদের কাছে থাকা ফুট ওভারব্রিজ সংক্রান্ত যাবতীয় নথি অবিলম্বে বিজ্ঞাপন দফতরকে হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে? এর উত্তর অবশ্য দিতে পারেননি পুর কর্তৃপক্ষ।

ঘটনাপ্রবাহ দেখে পুর প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, এর মধ্যে অস্বাভাবিক কী আছে? কারণ, বিজ্ঞাপনময় এ জগতে ফুট ওভারব্রিজের দায়িত্ব তো তুচ্ছ বিষয়! সে যতই এই বিষয়ে পুর বিজ্ঞাপন দফতরের অবস্থা অনেকটা ‘ঢাল-তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দার’-এর মতো হোক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement